আকবরের মৃত্যু

আকবরের মৃত্যু- নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “আকবরের  অন্তিম জীবন” বিভাগের একটি পাঠ। তখন আকবরের বয়স ছিল তেষট্টি বছর। এক বছর পূর্বে তাঁর মাতা প্রয়াত হয়েছেন । এ কথা বলা যেত না যে পাকা ফলের মতো ঝরে পড়ার অবস্থায় আকবর। সারা জীবন তিনি অত্যন্ত কর্মঠ পুরুষ ছিলেন। অন্তিম জীবনে পুত্রের বিদ্রোহ বরদাস্ত করা ব্যতীত তাঁর আর কোনো কাজ ছিল না, বিগত জীবনের সমস্ত উদ্দেশ্যই শেষ হয়ে গিয়েছিল।

আকবরের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী আমির ও সেনাপতি রাজা মানসিংহ ও তাঁর দুগ্ধ-ভ্রাতা আজিজ কোকা সলীমের চাল-চলন দেখে চাইছিলেন, তাঁকে বঞ্চিত করে খুসরোকে সিংহাসনে বসানো হোক। তবে তখন আকবরের ইস্পাত-কঠিন শরীরও আর কিছু পেরে উঠছিল না। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে সেপ্টেম্বর রবিবার তিনি সূর্য-বন্দনা ভালোভাবেই সারেন। 

আকবরের মৃত্যু

 

আকবরের মৃত্যু | আকবরের  অন্তিম জীবন | আকবর

 

পরদিন আমাশয় রোগে আক্রান্ত হন, শাহী চিকিৎসক হেকিম আলী আট দিন কোনো ওষুধ দিলেন না, ভাবলেন, স্বাভাবিকভাবেই শরীরে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। তাতে কোনো লাভ না হওয়ায় পূর্ণমাত্রায় ওষুধ দিতে শুরু করলেন। ইতিমধ্যে সলীম ও খুসরোর হাতির লড়াইয়ে তাঁদের নওকরদের মধ্যে যে-কলহ হয়, তারও ধাক্কা লেগেছিল মনে, সেজন্য অবস্থার আরও অবনতি হল। ভারত-ভাগ্যের অস্তায়মান সূর্য রোগশয্যায় শায়িত ছিল। বাদশাহের মৃত্যুকালে যে-প্রসঙ্গের আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক, সঙ্গত কারণেই সে-সময় তার অবতারণ শুরু হল ।

আমিরেরা নিজের নিজের মতো প্যাচ কষতে শুরু করলেন। দরবারের সবচেয়ে বড় আমির রাজা মানসিংহ ও মির্জা কোকা তাঁদের ভাগিনেয় ও জামাতার পিছনে ছিলেন। খুসরোর একটিই পত্নী ছিলেন এবং তিনিও খানে-আজমের কন্যা। উভয়েই ভাবলেন, সলীম পথের কাঁটা, তাঁকে সরিয়ে দিলেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় । সলীমের সমর্থকও কম ছিল না। বখ্শী শেখ ফরিদ ‘মুর্তজা খাঁ’ সমগ্র সাম্রাজ্যের বখ্শী (সামরিক অর্থমন্ত্রী) ছিলেন। তিনি সর্বদা সলীমকে সজাগ রাখার চেষ্টা করতেন। 

এইরকম একটা দিনের জন্যই খুসরো কয়েক বছর ধরে তাঁর শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে রোজ এক হাজার টাকা করে বিলিয়ে আসছিলেন। একবার সলীম পিতাকে দেখার জন্য যমুনা অতিক্রম করে নৌকো থেকে নামতেই অমনি তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তিনি তাঁর প্রাসাদে ফিরে যান।

খানে-আজম ও মানসিংহ আমির ও সেনাপতিদের বৈঠকে প্রস্তাব পেশ করেন যে বাদশাহকে এত দুঃখ-কষ্ট দিয়েছেন যে-পুত্র, তাঁকে  সিংহাসন-লাভে বঞ্চিত করা হোক। কিন্তু অধিকাংশ তার কঠোর বিরোধিতা করে বলেন : এটা চগতাঈ বংশের নিয়ম-বিরুদ্ধ। বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। সলীম-সমর্থক রাজা রামদাস কছওয়াহা এই গণ্ডগোল খুব লক্ষ্য করছিলেন।

এই সময় ধন-সম্পদ খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, সেটাকে রক্ষা করার জন্য তিনি তাঁর বিশ্বস্ত রাজপুতদের নিযুক্ত করে দিলেন। শেখ ফরিদ প্রভাবশালী সেনাপতি ওয়ারহার সৈয়দদের সলীমের পক্ষভুক্ত করলেন। তাঁরা সলীমের পক্ষে বলে জানিয়ে দিলেন। তাঁরা ভেবে দেখলেন, তাঁদের পরিকল্পনাকে সফল করে তোলা সম্ভব হবে না, যদি না বাদশাহের অন্তিম কালে খুসরো-সহ মানসিংহকে বাংলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় ।

খানে-আজম ও মানসিংহের সশস্ত্র লোকজন চারদিকে ছড়িয়ে ছিল। সলীম যদি এই সময় ঘর থেকে বাইরে বেরোতেন, তাহলে তাঁকে কয়েদ করে ফেলা হতো। সেজন্য সলীম পিতাকে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থাতেও দেখতে যেতে পারেননি। খুররম সর্বদা অসুস্থ পিতামহের কাছে থাকতেন এবং তিনি পিতার না-আসার কারণ সব বুঝিয়ে বলতেন।

পিতা খুমকে অনেক করে বলে পাঠালেন, চারদিকে শত্রু, আমার কাছে চলে এস, কিন্তু তাতে তিনি সম্মত হলেন না। মাতাও দৌড়তে দৌড়তে এলেন তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কিন্তু খুম সেখান থেকে নড়তে চাইলেন না। পিতামহের মৃত্যুশয্যায় কাছে খুমের থাকার ফলে সলীম খুব উপকৃত হয়েছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।

সলীম পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ছটফট করছিলেন, কিন্তু তাঁর হিতৈষীরা বিপদের আশঙ্কায় তাঁকে যেতে দিচ্ছিলেন না। অবশেষে সলীম পিতার নিকটে গিয়ে উপস্থিত হলেন। বাদশাহ তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করলেন। দরবারের আমিরদের ডেকে পাঠালেন, তারপর পুত্রকে বললেন— “পুত্র, আমি চাইনে আমার ও আমার মঙ্গলাকাঙক্ষীদের মধ্যে কোনো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এঁরা বছরের পর বছর ধরে আমার সঙ্গে যুদ্ধ ও শিকারে দুঃখকষ্ট ভোগ করেছেন, তরোয়াল ও তুফানের সামনে নিজেদের প্রাণ বাজি রেখেছেন, আমার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি, রাজ্য ও ধনসম্পদের সমৃদ্ধি-সাধনে এঁরা নিজেদের প্রাণোৎসর্গ করতে চেয়েছেন।” এই বছর আমিরেরাও এসে গেলেন । তখন তাঁদের দিকে তাকিয়ে বাদশাহ বললেন— “হে আমার বিশ্বাসভাজনেরা, প্রিয় বন্ধুরা, আমি ভুল করেও যদি তোমাদের কাছে কোনো অপরাধ করে থাকি, মার্জনা করে দিও।”

এ কথা শুনে জাহাঙ্গির পিতার পায়ে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আকবর পুনরায় বললেন— “বংশের মহিলা ও বেগমদের খোঁজ-খবর নেওয়াতে কখনো অবহেলা কোরো না। আমার পুরনো সেবক ও মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী সঙ্গীদের কখনো ভুলে যেও না।” তিনি খুসরোর সমর্থকদেরও কোনো ক্ষতি না করার শপথ নিতে বললেন। সলীম শপথ নিয়েছিলেন এবং তা পালনও করেছিলেন।

 

আকবরের মৃত্যু | আকবরের  অন্তিম জীবন | আকবর

 

২২শে অক্টোবর শনিবার সাধু জেভিয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের প্রাসাদে ডেকে আনা হয়। তাঁকে অসুস্থ বাদশাহের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। পাদরি ভেবেছিলেন, বাদশাহ মৃত্যুশয্যার শায়িত, অন্তিম মুহূর্তে তাঁকে মুক্তির জন্য শিক্ষাদান করবেন, কিন্তু তাঁকে সভাসদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় খুব খুশি-খুশি দেখলেন, সেজন্য দর্শন সেরেই ফিরে গেলেন।

সোমবার দিন খবর পেলেন— অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। সাধু আবার তাঁর কাছে যেতে চাইলেন, কিন্তু অনুমতি পেলেন না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আকবর সজ্ঞানে ছিলেন, যদিও মৃত্যুর কিঞ্চিৎ পূর্বে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছিলেন। সলীম যখন শেষবার সিজদা করলেন, তখন আকবর ইশারায় শাহী পাগড়ি ও পায়ের কাছে পড়ে থাকা তরোয়াল পরিধান করতে বললেন। তারপর তাঁকে কক্ষের বাইরে যেতে ইঙ্গিত করলেন।

বাইরে অপেক্ষামান লোক দারুণ হর্ষধ্বনি সহকারে ভাবী বাদশাহকে স্বাগত জানাল। আকবর ঈশ্বরের নাম নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। মুসলিম ঐতিহাসিক বলতে চেয়েছেন যে আকবর শেষকালে ইসলাম স্বীকার করে নিয়েছিলেন, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। অন্তিম কালে তাঁর কোনো পাদরী বা মোল্লার দোয়ার আবশ্যকতা হয়নি। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার (হিঃ ১০১৪, ১২ই জমাদি-উস্-সানী) মধ্যরাত্রির সামান্য পরে ভারতের ভাগ্যনক্ষত্র অস্তমিত হয় ।

আকবরের মৃত্যু বিষয়ে নানারকম খবর ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক। কেউ কেউ বলেছেন, সলীম তাঁকে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন। আকবরের মৃত্যুর তেরো-চোদ্দ বছর পূর্বে, মুরাদ ও দানিয়াল তখন জীবিত ছিলেন, তখনকার ঘটনা লিখতে গিয়ে বদায়ূনী বলেছেন— “একদিন বাদশাহ উদরপীড়ায় এতই কাতর হয়ে পড়েছিলেন যে ধৈর্য রাখতে পারছিলেন না। তিনি ছটফট করতে করতে এমন কথা বলেন যে তাতে সন্দেহ হয়, সলীম তাঁকে বিষ দিয়েছেন।

বারবার বলছিলেন : শেখবাবা, সারা রাজ্য তোমারই, কেন আমার প্রাণ নিলে?” সন্দেহ ঘনীভূত হওয়ার কারণ এর চেয়ে বেশি আর কি হতে পারে? তখন সলীমের দুই ভ্রাতাই বর্তমান ছিলেন, সুতরাং এরূপ সন্দেহের অবকাশও ছিল। অথচ, এই সময় তার কোনো প্রয়োজন ছিল না, বিশেষ করে যখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী খুসরো ও তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা মানসিংহকেও অনেক দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং চারদিকে সলীমেরই প্রভাব ছিল।

টড বুঁদির ইতিহাসের উদাহরণ টেনে লিখেছেন যে আকবর রাজা মানসিংহকে বিষ প্রয়োগ করে তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে চেয়েছিলেন, সে-উদ্দেশ্যে একই রকম দুইটি বড়ি তৈরি করান, তার মধ্যে একটি বিষ-হীন বড়ি ছিল নিজের জন্য। আকবর তাড়াহুড়ো বিষযুক্ত বড়ি নিজেই খেয়ে ফেলেন ।

হলেণ্ডি ফন ডেন ব্রোয়েক আকবরের মৃত্যুর তেইশ বছর পরে (১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে) আরও একটি জনরব শুনেছিলেন— “বাদশাহ সিন্ধুর ঠটার শাসক জানী-পুত্র মির্জা গাজির কোনো বেয়াদবিতে অসন্তুষ্ট হন। তিনি তাঁকে বিষ দিতে চেয়েছিলেন।

নিজের চিকিৎসকদের দিয়ে একই রকম দুইটি বড়ি তৈরি করে তার একটিতে বিষ দিতে বলেন। তিনি বিষযুক্ত বড়ি গাজিকে খাওয়াবেন ও নির্বিষ বড়ি নিজে খাবেন ভেবেছিলেন । কিন্তু ভ্রমবশত উলটো ব্যাপার ঘটে। তিনি বড়ি দু’টো নাড়াচাড়া করতে করতে ভুল করে নির্বিঘ্ন বড়ি গাজিকে দিয়ে বিষযুক্ত বড়ি নিজে খেয়ে ফেলেন। যখন তিনি নিজের ভুলের কথা জানতে পারেন, তখন বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেজন্য তা আর দূর করা সম্ভব হয়নি।”

সমস্ত দেখেশুনে ভিনসেন্ট স্মিথের রায়— আকবরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। আকবরের মৃত্যুতে জনসাধারণ যত শোক পালন করেছিল, তাঁর কৃপাধন্য আমিরেরা হয়তো ততটা শোক পালন করেননি, তাতে সন্দেহ নেই । তখন তাঁদের মৃত নয়, জীবিত বাদশাহের কৃপা প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু শিষ্টাচার পালনেরও তো আবশ্যকতা ছিল । প্রথা অনুযায়ী আকবরের শবদেহ দুর্গদ্বার দিয়ে নয়, দেওয়াল ভেঙেই বের করা হয়। জাহাঙ্গির ও আকবরের পৌত্ররা শবাধারে কাঁধ দিয়েছিলেন। আকবর নিজের জীবনকালেই সিকান্দারাতে নিজের জন্য সমাধি-সৌধ নির্মাণ শুরু করেছিলেন। দুর্গ থেকে তিন মাইল গিয়ে শবাধার সেখানে পৌঁছায়। পুত্র ও অল্প কিছু লোক শোক প্রকাশ করছিলেন। জেস্যুইট ঐতিহাসিক যথার্থই লিখেছেন— “সংসার তাঁর সঙ্গে এই রকমই ব্যবহার করত যার কাছ থেকে তাদের মঙ্গল, ভয় বা ক্ষতির কোনো আশাই ছিল না।”

জাহাঙ্গির (সলীম) জীবনে তাঁর পিতাকে যতই অতিষ্ঠ করে তুলুন না কেন, শেষে তিনি পিতার পরম ভক্ত ছিলেন। ‘তুজুক-জাহাঙ্গিরে’ পিতার উল্লেখ করার সময় তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। পিতার তৈরি নিজের সমাধি-সৌধ জাহাঙ্গিরের পছন্দ হয়নি, সেজন্য কয়েকটি নতুন নকশা দেখে তিনি তার পুননির্মাণ করান, পনেরো লক্ষ টাকা ব্যয় করেন, আজকের হিসেবে তিন-চার কোটি টাকা। দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে ঔরঙ্গজের ব্যস্ত থাকার সময় ১৬৯১ খ্রিস্টাব্দে খবর পান: “জাঠরা সৌধের বড় বড় পিতলের দরজা ভেঙে নিয়ে গেছে। সোনা-রূপো, হীরে-মুক্তোর অলঙ্কার লুঠ করে নিয়ে গেছে।

 

আকবরের মৃত্যু | আকবরের  অন্তিম জীবন | আকবর

 

যেগুলো কোনো কাজের নয় ভেবেছিল, সেগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আকবরের অস্থিও পুড়িয়ে দিয়েছে।” সিকান্দারার দর্শনার্থীরা এ কথা জানেন না যে তাঁরা একটা ফাঁকা ভাঙাচোরা করব দেখছেন। আকবরকে যদি জিজ্ঞাসা করা সম্ভব হতো, তাহলে তিনি এটাই জবাব দিতেন : আমার চেয়ে তিন শত পঁচিশ বছর পরে মহাপ্রয়াণকারী ভারতের জাতির জনক (গাঁধীজী)-এর মতো আমার শরীরের ভস্মও কোনো চিহ্ন না রেখে উড়িয়ে দাও।

ভারতের দুই মহান সন্তান আকবর ও গাঁধীর শূন্য সমাধির উপর যদি শ্রদ্ধা-ভক্তির ফুল চড়ানো হয়, তাহলে তাতে অবাক হওয়ার ও দুঃখ করার কোনো আবশ্যকতা নেই। দুঃখ এই যে আকবরের মূল্য এখনও আমাদের দেশ সম্যকরূপে উপলব্ধি করতে পারেনি |

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment