জৈন ধর্মের প্রভাব – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “সাংস্কৃতিক সমন্বয়” বিভাগের একটি পাঠ। জৈন ধর্ম আকবরের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। জৈন মুনি হীরবিজয়- শূরী, বিজয়সেন শূরী ও ভানুচন্দ্র উপাধ্যায় আকবরের দরবারে এসেছিলেন। ভানুচন্দ্র তাঁর কাদম্বরীর টীকায় জালানুদ্দীন আকবরের নাম সসম্মানে উল্লেখ করেছেন।
জৈন ধর্মের প্রভাব
আকবরের উপর হীরবিজয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল। জৈন-পরম্পরায় বলা হয়ে থাকে যে তিনি আবুল ফজল, শেখ মুবারক ইত্যাদি কুড়িজন আমির-সহ আকবরকে জৈন ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে কাবুল থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আকবর গুজরাতের সিপাহসালারকে লিখেছিলেন, তিনি যেন মুনি হীরবিজয়কে দরবারে প্রেরণ করেন । তিনি আহমদাবাদে আসেন।
সিপাহসালারের কথায় তিনি দরবারে যেতে সম্মত হন। জৈন মুনিদের নিয়ম অনুসারে তিনি আহমদাবাদ থেকে পায়ে হেঁটে সিক্রীতে এসে পৌছান। সিক্রীতে ধুমধামের সঙ্গে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। আবুল ফজলের উপর আতিথেয়তার ভার অর্পণ করা হয়েছিল।
কিছুদিন ধর্ম ও দর্শন নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর হীরবিজয় আগরা যান। বর্ষাকালের শেষে পুনরায় সিক্রীতে আসেন। তিনি বাদশাহকে বলেন, বর্ষাকালের কিছুদিন প্রাণী-বধ বন্ধ করা হোক, পাখিদের খাঁচা থেকে এবং বন্দীদের জেল থেকে মুক্ত করে দেওয়া হোক।
পরবৎসর (১৫৮৩ খ্রিঃ) তাঁর সেই কথা অনুসারে আকবর ফরমান জারি করেন এবং আদেশ লঙ্ঘনকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেন। মুনির প্রভাবেই আকবর তাঁর মৃগয়াপ্রীতি ত্যাগ করেন। মৎস্য-শিকারও বন্ধ করে দেন। আকবর হীরবিজয়- শূরীকে ‘জগদ্বন্ধু’ উপাধি দেন। আকবর তাঁকে নানা বস্তু উপহার দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আগরা ও প্রয়াগ হয়ে গুজরাতে ফিরে যান। তিন বছর পর বাদশাহ লিখিত ফরমান জারি করে জিজিয়া বন্ধ করেন এবং তার প্রায় সমকালেই প্রাণীহত্যা বন্ধ করে দেন। ভানুচন্দ্র উপাধ্যায় দরবারে থেকে যান। ১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে অপর এক মুনি সিদ্ধিচন্দ্র লাহৌরে আকবরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁকেও উপাধি এবং জৈন তীর্থসমূহের তত্ত্ববধানের ভার দেওয়া হয়। শত্রুঞ্জয় তীর্থযাত্রীদের কর মকুব করে দেওয়া হয়।
শত্রুঞ্জয় পর্বতের (কাঠিয়াওয়াড়ের পালিতানার নিকটস্থ) উপর আদীশ্বর মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন হীরবিজয়- শূরী, সেখানে ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের একটি অভিলেখে শূরী ও আকবরের প্রশংসা করা হয়েছে। ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে হীরবিজয় শূরী অনশনে থেকে দেহত্যাগ করেন।
আরও দেখুনঃ