আজকে আমরা আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে তাজউদ্দিন আহমদের ভাষণ পর্ব ১, ১৯৭৪, ১৯৭৪ নিয়ে আলোচনা করবো।

আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে তাজউদ্দিন আহমদের ভাষণ পর্ব ১, ১৯৭৪
দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নবগঠিত সর্বোচ্চ পরিষদের সভায় এই সর্বপ্রথম আমরা সমবেত হয়েছি। আগে আমরা যে সম্মেলন করতাম তখনকার পটভূমিতে তার কার্যক্রম ছিল ভিন্ন ধরনের। স্বাধীনতার পর আমাদের দলীয় সংগঠনের এই সর্বোচ্চ পরিষদ কার্যক্রম ভিন্নরূপে হবে এটাই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু আজকে এই সম্মেলনে শ্রদ্ধেয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবকে আমাদের দলের দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যে অভিজ্ঞতা পেয়েছি তার আলোকে একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বলেছেন।
যার ফলে দলের নেতা ও কর্মী ভাইয়েরা আমাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নিতে পারেন। এছাড়াও আপনাদের নিজেদেরও প্রত্যেকের একটি ধারণা রয়েছে এবং আপনারা অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে এই সম্মেলনে এসেছেন। যে সব প্রশ্নের সম্মুখীন আপনারা হয়েছেন আপনাদের দৈনন্দিন কাজে, গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে তেমনিভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও আপনাদের অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে।
আগামী দিনে যারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হবেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ ভবিষ্যতে যখন কাউন্সিল মিটিং হবে, তখন যেন আরও দীর্ঘসময় দিয়ে সমস্ত নেতা-কর্মীর সুস্পষ্ট ধারণা সৃষ্টির জন্য তাদের সমস্ত প্রশ্নের আলোচনার সুযোগ কাউন্সিলে থাকে, আপনারা অবশ্যই সেই ব্যবস্থা করবেন আগামীর যারা কর্মকর্তা হবেন, যাদের কাঁধে এই দলের গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত হবে তাদের কাছে একজন আওয়ামী লীগ কাউন্সিলার হিসেবে আমার অনুরোধ কমপক্ষে পাঁচ দিন যাতে আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা আলোচনার সুযোগ পান তার ব্যবস্থা করতে হবে।
আগে সুযোগ কিছু কম ছিল, কিন্তু স্বাধীনতার পর আমাদের অনেক নেতার সুযোগ এবং সৌভাগ্য হয়েছে বিদেশে বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে জাতীয় রাজনৈতিক দল কি ভাবে কাজ পরিচালনা করেন, কি ভাবে তাদের বার্ষিক সম্মেলনগুলো হয় তা দেখবার। আমরা সেই সমস্ত কার্যক্রম থেকে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বা উপযোগী কিছু ভাল ভাল বিষয় গ্রহণ করতে পারি যা থেকে আমাদের দল এবং এর নেতা কর্মীরা উপকৃত হতে পারেন ।
আপনাদের মনে যে সব কথা ছিল, তা হয়ত পরিষ্কারভাবে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ আজকে এই অল্পসময়ে নাও হতে পারে। তবে আমি একজন আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে একটি ব্যাপার এই দলের জন্মলগ্ন হতে আজ পর্যন্ত দেখে এসেছি যে উপরের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত সবার মধ্যে মতামতের একটা মোটামুটি ঐক্য থাকে। তাই আমরা আশা করব আলোচনা পর্যাপ্ত না হলেও আমাদের যারা যারা আলোচনা করেছেন বা করবেন তারা অনেক পরিমাণে আমাদের আপামর নেতৃত্বের এবং কর্মীবৃন্দের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারবেন।
অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আমাকে কিছু বলতে বলেছেন। সত্যিকারভাবে বলতে গেলে রাষ্ট্র পরিচালনা দলের ভূমিকা দেশের অর্থনৈতিক উত্থান-পতন, অবনতি-উন্নতি, উৎকর্ষ-অপকর্ষের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দেশের রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের জনপ্রিয়তা ও স্থিতিশীলতা এবং যে দলের তারা প্রতিনিধি অর্থাৎ শাসক- সে দলের উত্থান, পতন, অপ্রিয়তা, উৎকর্ষ অপকর্ষ নির্ভর করে সেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর।

আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আওয়ামী লীগ কর্মী এবং নেতা; যে সেখানেই রয়েছেন তাদের কাছে গোপন করার বিষয় এটা নয় যে, আমরা একটি অর্থনৈতিক দুর্গতির মধ্যে রয়েছি। দুর্গতি যে আজকেই সৃষ্টি হয়েছে একথা বললে যেমন ভুল হবে, আবার স্বাধীনতার পর এই দু’বছরের মধ্যে যেখানে যেখানে আপনাদের দৃষ্টিতে, দেশের মানুষের দৃষ্টিতে, অবনতি হওয়া উচিত ছিল না অথচ হয়েছে- সেগুলোও যদি আপনাদের কাছ থেকে আমরা গোপন করে হয়। তাও সঠিক হবে না, এই কথাটা আমি বলে রাখতে চাই।
আমরা মাঝে মাঝে যখন বাইরে যাই প্রশ্নের সম্মুখীন হই । এই অতি সম্প্রতি নেত্রকোনায় আমি নিজে গিয়ে এসেছি রাত দেড়টা পর্যন্ত স্থানীয় কর্মী এবং নেতা ভাইদের সাথে কথা বলেছি। তারা যে প্রশ্নগুলো আমাকে করেছিলেন। আমার মনে হয় বাংলাদেশের যারা এখানে উপস্থিত তারাও তেমনি ধরনের প্রশ্নই করবেন । তারা আমার কাছ থেকে মোটামুটি একটি কথাই জানতে চেয়েছিলেন, তাদের সামনে যে প্রশ্নগুলো আসছে তার সঠিক জবাব কি হবে?
একজন যদি একরকম জবাব দেয় দ্বিতীয়জন নেয় অন্যরকম, তাহলে প্রশ্নের সমাধান না হয়ে বিভ্রান্তির পরিমাণ আরও বাড়ে। তাই আমি আজকে আবেদন কবর যারা ভবিষ্যৎ কর্মকর্তা হবেন, এই কাউন্সিল যাদেরকে নির্বাচিত করবেন, তার দলের যে কার্যক্রম তাকে স্বচ্ছ রাখবেন। সেই কার্যক্রম কি? দলের কার্যক্রম ৩ ধরনের থাকে, প্রথমটি স্বল্প অর্থাৎ Short Term, দ্বিতীয়টি মধ্যমেয়াদি অর্থাৎ Middle Term, এবং তৃতীয়টা হলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ Long Term.
এই Short Term প্রোগ্রাম নিয়েই অসুবিধা Long Term প্রোগ্রামটা একটা মোটামুটি ব্যাখ্যা দিয়ে ছেড়ে নিলে বেশ। কিছুদিন এমনকি বছরের পর বছর চালিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু Short Term প্রোগ্রামের পরিবর্তন হয় পরিবর্তনের সাথে সাথে আর তখনি প্রয়োজন হয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই নেতৃত্বের কাজ তখন এই যে গতি পরিবর্তন হওয়ার ফলে নতুন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া এবং সেই পরিস্থিতির মোকাবেলার পন্থাটি পরিষ্কারভাবে কর্মী সাধারণকে জানিয়ে দেওয়া, সংগঠনকে জানিয়ে দেওয়া। যাতে করে কেন্তু থেকে শুরু করে আমানের গ্রাম পর্যন্ত একইভাবে দলের সমস্ত কর্মীদের সাথে আমাদের সবার চিন্তা ভাবনার সমন্বয় থাকে।
অর্থাৎ দল হিসেবে বলতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা কিংবা নেতৃত্ব যা ভাবছেন, যে সমাধান চিন্তা করছেন, সমস্যাকে যে আলোকে দেখছেন, সেটা যেন গ্রাম পর্যন্ত কর্মী ভাইয়েরা সেই আলোকে দেখেন, সেইভাবে ভাবেন সেইভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং সেইভাবে সমাধানের কথা চিন্তা করেন। কাজেই সেই ব্যবস্থাটাই অনাগত যে নেতৃত্ব তারা যেন করেন, তাদের কাছে আমার এই বক্তব্যটি রেখে গেলাম ।
সরকার হিসেবে আমরা যে কাজ করি সেই কাজের ভালো এবং মন্দের ফল প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করতে হয় আমাদের দলকেই আর দলকে অবহিত রাখতে হয় সেই জন্যে। সরকার কি করতে যাচ্ছে, সরকারের কাজ এবং কাজের পথে সবসময় যে সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো থাকে তার সাথে দলীয় যে নীতি এর একটা পরিষ্কার যোগাযোগ থাকা দরকার। কারণ দলীয় নীতি সাধারণত সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম থাকে না broad principle থাকে যেখানে আর সরকারে যে ব্যাপারগুলো থাকে সেগুলো কার্যকর করতে গেলে, সাময়িকভাবে হয়ত দলীয় কর্মী বা নেতৃত্বের কাছে অনেক সময় মনে হবে যে।
এটা বোধহয় বিচ্যুতি। সেই বিচ্যুতিটা কেন করা প্রয়োজন, সেটাও দলের কাছে সুস্পষ্ট হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব এবং কর্মীদের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে সরকারের সাথে সংগঠনের যেন খুব একটা বেশি সংযোগ নেই। এই ধারণাটার কারণ কি? তা আমি বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি না । কিন্তু ধারণাটা যে রয়েছে এটা আমি অন্তত ব্যক্তিগতভাবে, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী এবং এই দলের প্রতিনিধি হিসেবে, সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে বুঝেছি। সেখানেই গিয়েছি এই ধারণাটাই যেন অনুভব করেছি।
কাজেই আমি আবার নিবেদন করব ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের কাছে- সংগঠন এবং সরকারের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক। গড়ে তুলতে হবে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যে নির্বাহী কমিটি হবে (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি) সেই ওয়ার্কিং কমিটিও গতানুগতিক নিয়মে না বসে ভবিষ্যতে কিছু সময় নিয়ে বসবেন। বিভাগীয় মন্ত্রীদের বক্তব্য, তাদের বিরুদ্ধে বা তাদের সম্পর্কে দলীয় নেতা-কর্মীরা বলবেন, সবসময় বিরুদ্ধে বলবেন এটা আমি চিন্তা করব না।
আপনারা যখন আমাদের বিরোধিতা করেন তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এবং আমার সমস্ত সহকর্মীবৃন্দরা ব্যক্তিগতভাবে এটাই ভাবেন যে, এটা কারো বিরুদ্ধে নয়। বিরুদ্ধ মনোভাবের লোকেরা যে কথাগুলো ভাবে তাই আপনারা প্রকাশ করেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে আপনাদের বক্তব্যগুলো পরিষ্কারভাবে শোনা এবং সময় নিয়ে শোনা। সময় এত অপর্যাপ্ত হওয়া উচিত হবে না। দেশে সমস্যা থাকবেই।
আমরা যদি মনে করি যে সমস্যা আছে অতএব বেশি লম্বা মিটিং করা যাবে না, এটা ঠিক নয় বলে আমি মনে করি। সমস্যা থাকবেই, প্রতিদিন সমস্যার প্রবলতা যে বাড়বে না তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। ঘাত-সংঘাতের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সমাজের জীবন। ঘাত-সংঘাত না থাকলে মানুষের সমাজের ক্রমবিকাশ হতে পারে না, কাজেই সংঘাত থাকবেই। সেই সংঘাত যে রূপ ধারণ করুক না কেন তার মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর কাছে।

জাতির পিতা হিসেবে, মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে আবেদন করব এবং ভবিষ্যতে যে ওয়ার্কিং কমিটি হতে যাচ্ছে তাদের কাছেও আমার আবেদন থাকা যারাই সদস্য হবেন তারা একটু দীর্ঘসময় বসে মন্ত্রীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে যে সব কথা বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা শোনেন বা তাদের নিজের মনে যে প্রশ্ন তা পরিষ্কারভাবে, বিশদভাবে বিশ্লেষণ ও আলোচনা করবেন। সেখানে মন্ত্রীদের বক্তব্য, সর্বোপরি আমাদের সর্বময় নেতা বঙ্গবন্ধুর কি বক্তব্য সেটাও শোনা প্রয়োজন হবে।
সে জন্য যে সময়টুকু সরকার সেটুকু দেবার জন্য তৈরি থাকতে হবে। আর মাঝে মাঝে জেলা কমিটির সম্পাদক, সভাপতি মাসে হোক ছয় মাসে হোক একত্রে বসলে জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিরা যারা ওয়ার্কিং কমিটির মেম্বার নন তারাও সরাসরি তাদের প্রয়োজনীয় বক্তব্য শুনে যেটা তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় সেটা গ্রহণ করবেন । যেটা গ্রহণযোগ্য নয় সেটাও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু মতামতের ভিত্তিতে আমরা একমত হবার চেষ্টা করব। সেই মতটাকেও আমরা দলের সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেব।
বর্তমানে আমি যে জিনিসটা লক্ষ্য করেছি- খোলাখুলি বলছি, আমাকে একটু মাফ করবেন। চার বছর হয়ত পুলিশ টুলিশ দিয়ে আমরা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করতে পারব। গত মার্চ মাসে ইলেকশন হয়েছে। বর্তমানে যাদেরকে নিয়ে আমরা বিব্রত বোধ করছি, নাম বেশি বলতে চাই না। এক সময় ওরা আমাদের মধ্যেই ছিল। খুব বেশি দিনের কথা নয়, ওরা তখন আমাদের চাইতে ভালো কথা বলত এবং তখন সাময়িকভাবে অনেকে মনে করত এরাই বোধহয় আসল কথা বলছে।
ওরাও একসময় বলেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া দরকার। এই মন্ত্রীতন্ত্রিরা খুব বেশি সুবিধার নয়। তাদের আসল মতলব ছিল বঙ্গবন্ধুকে আস্তে আস্তে একা করে ফেলা- যেটা আমাদের শ্রদ্ধেয় সৈয়দ নজরুল সাহেব বললেন, একা করে একটু বিচ্ছিন্ন করে দেয়া একা লোককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া খুব সহজ। তাদের মতলব কি ছিল। এ রকমই একটা কিছু ছিল বোধহয় তবে বঙ্গবন্ধু তার জীবনে অনেক দেখেছেন। সৈয়দ সাহেব যে নামগুলো বলেছেন তাদের এবং বাড়ির কাছের অন্যদেরও তিনি দেখেছেন।
এক আল্লাহ্, এক কোরআান ছিল মুসলমানদের মধ্যে মুসলিম লীগের একটা প্রচারণা। এর বিরুদ্ধে কোনো চিন্তা বা কথা বলা যেত না এমন কি মনে মনে চিন্তা করাও যেত না- সেটাও দেখেছি, বঙ্গবন্ধুও দেখেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর লিয়াকত আলি খানকে দেখেছি, তারপর গোলাম মুহম্মদ গোলাম মুহম্মদকে আমানের ছোট ভাই-বোনেরা দেখেন নাই। লোকটি একটা কথা পর্যন্ত বলতে পারত না। কিছু বোঝা যেত না। একটা অপদার্থ, একটা অর্থব লোক, সেই লোকটারও কি ক্ষমতা আপনারা না দেখলে বুঝতে পারতেন না, এটাও দেখলাম। ইসকিলার মির্জার কি ধরনের ক্ষমতা সেটাও দেখলাম।
তারপর আয়ুব খাঁ এল। এই সময়ে রীতিমতো আমাদেরও সংশয় দেখা দিয়েছিল, যে লোক দশ বৎসর ক্ষমতায় কাটিয়ে গেছে, একটা মানুষের জীবনে আর বা চাই-ই কি? যদি আরও পাঁচ-সাত বছর যেতে পারে তবে কাজ হয়ে গেল। সেও দেখলাম। তারপরে ইয়াহিয়া খান এলেন, তাকেও দেখলাম। ফলে বঙ্গবন্ধু এসব দেখে তাদের মলতবটা বুঝে গেছেন। ঐ যে একা করবার একটা বুদ্ধি। এটা উনি নেননি। তাকে একা করে সব ধারা তখন বঙ্গবন্ধুর দিকে তখনতো সৈয়দ সাহেবকেও মারা লাগে না, মোশতাক সাহেবকেও মারা লাগে না। বঙ্গবন্ধুকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেই হয়। এই রকম একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। যাই হোক আজকে সেই সমস্ত ধকল কাটিয়ে আমরা এখনও টিকে রয়েছি।
এখন কতকগুলো বিতর্ক আসে। বিতর্ক যে আসে সেই কথাটা আপনারা অনেক বলেছেন এবং আমি নিজেও কিছু কানাঘুষা শুনেছি বিভিন্ন জায়গায় যে, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র না সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র। অথবা গণতন্ত্রের জনা সমাজতন্ত্র না সমাজতন্ত্রের জন্য গণতন্ত্র। এ কথাটাও কিন্তু একটা দেখা দিয়েছে। আলোচনা হচ্ছে গণতন্ত্র রক্ষ করার জন্য, নির্ভেজাল সংসদীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, প্রয়োজন হলে আমরা সমাজতন্ত্র ছাঁটাই করব কিনা, অথবা সমাজতন্ত্রকে নির্ভেজাল সমাজতন্ত্র করবার জন্য গণতন্ত্রকে প্রয়োজনবোধে ছাঁটাই করব কিনা, এই প্রশ্নটাও কিন্তু রয়েছে ।
তবে আমাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে লক্ষ্য অনুসারে গণতন্ত্র সংসদীয় থাকবে। এখন এই সমস্ত প্রশ্ন কিন্তু শুধু মনে মনে না, কাগজপত্রে বেশ প্রচার হয়েছে। ফালেই আমরা যে সমাজ ব্যবস্থায় যাচ্ছি, মূল কথা হল সমাজের রাজনৈতিক স্বাধীনতা কেন চাই? রাজনৈতিক স্বাধীনতা চাই এই জন্য যে আমরা বাইরের হস্তক্ষেপ যা বাইরের প্রভাব মুক্ত আমাদের নিজেদের অর্থনীতি গড়ে তুলব এবং একটা সুখী, সুন্দর সমাজ আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে পড়ে তুলব।
সেই সমাজ গড়ার কাজে কোন কিছু যেন আমাদের অন্তরায় সৃষ্টি করতে না পারে সেই জন্য আগে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রটা হাতে নিতে হয় সেটার নামই রাজনৈতিক স্বাধীনতা সেই রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা বাঙ্গালিয়া পেয়েছি তার পিছনে রয়েছে একটা বিরাট ইতিহাস। আপনারা জানেন, সে সব শুনেছেন। আমাদের জেনারেল সেক্রেটারি তার রিপোর্টেও বলেছেন, এর আগেও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কোন নেতা বা কর্মী আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানেন না এই কথাটা আমার জন্য চিন্তা করাটাও অন্যায়।
কাজেই এই যে ১৯৪৯ সনের ২৩ জুন থেকে আওয়ামী লীগ যে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছে সেই আন্দোলনই ধাপে ধাপে প্রকটতর হয়ে ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে স্বাধীনতার আকার ধারণ করেছে। এ রাজনৈতিক স্বাধীনতার যুদ্ধ কেন করলাম? কেন বাঙ্গালি উদ্বুদ্ধ হল । স্বাধীনতা যুদ্ধ অনেক দেশেই হয় এবং দেখা য স্বাধীনতা যুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে একটা ঐকা আনা যায়। যেটাকে National Liberation বলা হয় National Liberation Struggle এ মানুষ সাধারণত ঐক্যবদ্ধ হয়। একটা অর্থনৈতিক লক্ষ্য নির্দিষ্ট না থাকলেও মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়। যেমন ধরুন পাকিস্তানের সময় হয়েছিল এবং অন্যান্য দেশে হয়। কেন হয়? National Liberation হয় সাধারণত বিদেশীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে অথবা বিদেশী প্রভাবের বিরুদ্ধে অথবা উভয়ের বিরুদ্ধে।
দেশে বিভিন্ন শ্রেণীর যে সমস্ত লোক থাকে সেই প্রত্যেক শ্ৰেণী মনে করে বিদেশীরা থাকলে, বিদেশী শাসন থাকলে আমার ক্ষেত্রে আমি বড় হতে পারি না, আরও বিকাশ সাধন করতে পারি না। তাই যে উঠতি পুঁজিপতি সেভাবে পাকিস্তানী, ইস্পাহানী, আদমজী, বাওয়ানী, করিম এদের জন্য আমি আর উপরে উঠতে পারছি না। তাদের একটা প্রতিযোগিতা থাকে। আবার ধরুন শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে থাকে যে, এই মালিক বেটাদের শোষণের জন্য আমি শ্রমিক আমার মেহনতের দাম পাচ্ছি না।
আমি খেয়ে বাঁচতে পারছি না। এমনিভাবে প্রত্যেকে তার সদস্যাকে নিজের নিজের মত ভাবে দেখে। কেউ ভাবে যে, আমি একজন ভাল শিক্ষক অন্যদেশে শিক্ষকের যে মর্যাদা আমার দেশে তা নেই । ঐ বিদেশীটার কারণে বোধহয় নেই। এই বিদেশীটা চলে গেলে হয়ত আমার মর্যাদা বাড়বে। ছাত্র মনে করে আমার লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি হবে- আমি যদি স্বাধীন হই এবং এই বিদেশীটা যদি চলে যায়। সাথে সাথে অবচেতন মনে পকেটমারও মনে করে যে, এই বিদেশীগুলো থাকার জন্যই আমি পকেট মেরে মাত্র পাই এক টাকা, পাঁচ আনা ।
ধরা পড়ে যাই, কিলগুতো খাই তারপরও তিনবার জেল খাটতে হয়, নাম বদলাইয়া কামে নামতে হয়। বোধহয় জাতীয় স্বাধীনতা হলে এটা কিন্তু সে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে না তবে এইটুকু বোঝে যে, জাতীয় স্বাধীনতা হলে আমার উন্নতি হবে। পকেটমারের উন্নতি কি? পকেটমারের উন্নতি যদি পকেট মারা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন কাজের সংস্থান হতে পারে তবে তো ভাল কথা। কিন্তু অবচেতন মনে সেটা থাকে না। মনে করে আমারও ভাল হবে।
ভাল যে কি হবে সেটার সুস্পষ্ট ধারণা কারো থাকে না। তারা মনে করে স্বাধীনতা হবার সাথে সাথে পকেটে হাত দিলে আমি অনেক পয়সা পাব। অথবা পকেটে হাত দিয়া ধরা পড়লে আমার জেল-টেল হবে না। এই রকম এক একটা চিন্তাধারা থাকে National Struggle এর সময়। National Liberation শেষ হয়ে গেলে তখন প্রত্যেকে যার যার চিন্তা অনুসারে সেই স্বাধীনতাটা ভোগ করতে চায়।

আজকে আমাদের সমাজে সেই ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কিনা, আমি বলতে চাই না, তবে আপনারা একটু চিন্তা করে দেখবেন। কারণ আপনাদের একটা কথা বলি, আমাদের প্রগতিশীল নেতাদের দুই একজনকে আমি দেখেছি, তাদের সামনে বক্তৃতা করেও বলেছি, মনে মনে তারা রাগ করেছে, কিন্তু কিছু বলতে পারে নাই। আমিও বলেছি, দেখি, মারধোর কর কি হয়। এটা দেখেছি ১৯৭১-এর নয় মাসে। আমি কবুতরের বাচ্চা জবাই করে কেমন করে এটা দেখতে পারতাম না।
তারপর মানুষ মারার জন্য ১৯৭১ সালে নিজে সংগঠন করেছি। কাজেই এখন আমার ভয়-চর নাই, মেরে ফেললে গেলাম। কিন্তু মারবার আগে একবার দেখে যাব এটাও ঠিক সামনেই বলেছি, এই যে গাড়িটা চালাও এটা কি তোমার বাপের ছিল? তোমার কিনবার মতো কি পয়সা হয়েছে? ব্লু বুকটা তো ঠিক করে নিয়েছ । বু বুক কিন্তু বদলিয়ে ঠিক করে নিয়েছে। বহু গাড়িওয়ালা আছে- এই অবস্থা।
আরও উদাহরণ আছে, যেমন বাড়ি, একটা বাড়িতে থাকে। এটা সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ করে নেয়নি। সে বাড়ির কিছুই করেনি, দেখেন দিব্যি দখল করে আছে। দুই একজন সম্পর্কে জানা যায় এরকম. ডাৱা কোনো দলের কী? অন্তত তারা যে কোন ডাল দলের নয় তা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। দুই/তিনটা বাড়ি দখল করে রেখেছে।নিজে একটায় থাকে আর তিনটা ভাড়া দেয়। ছাড়ে না কেউ, এমনও আছে। এটা কেন হল? এটা আমার মনে হয়, এই যে স্বাধীনতার আগে মনে মনে তাদের ধারণা ছিল যে স্বাধীনতা হলে পরে, আমি সব করতে পারব। এইরকম একটা ধারণা তাদের মধ্যে হয়ে গেছে।
মাফ করবেন আমাকে, আমি খোলাখুলিই বলব। আমার শ্রমিক ভাইয়েরা স্বাধীনতার আগে তাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা বোধ হয় আমরা দিতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুকে বলছি না। আমরা যারা তাঁর সহযোগী ছিলাম তাঁরা এর দায়িত্ব নিচ্ছি। বোধ হয় তাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারি নাই যে, সমাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কী? কলকারখানার জাতীয়করণের অর্থ কী? আমি সকলের কথা বলছি না, ভাল মন্দ সব জায়গায় আছে।
আমার শ্রমিক নেতা ভায়েরা বোধহয় কথাটা ভুল বুঝে ছিল যে স্বাধীনতা পেলে সমাজতন্ত্র হবে। সেই সমাজতন্ত্রে কল-কারখানার মালিকানাটা ঐ দশ টাকার শেয়ারারদের কাছ থেকে ঐ শ্রমিকদের নিয়ে দেওয়া হবে এবং শ্রমিকদের দিয়ে দিলে তারা তো আর ম্যানেজ করতে পারবে না, তখন শ্রমিক নেতা হিসেবে আমি ম্যানেজ করব । এই রকম বোধহয় একটা ধারণা ছিল ।
কিন্তু এটা সমাজতন্ত্রের গুণ নয়। এটা সমাজতন্ত্রের ধারণা নয়। সমাজতন্ত্রে জাতীয়করণ যেটা করা হয় সেটা সমাজের নিয়ন্ত্রণে আসে সমাজের মালিকানায় আসে। কোন গোষ্ঠী বিশেষের বা শ্রেণী বিশেষের হাতে আসে না। যা হোক এই ধারণা থেকেই স্বাধীনতার পর অপকর্মটি হয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। স্বাধীনতার পর কিছুদিন বেশ ভালই ছিল, বিশ্বাস করুন, একাত্তরে নিলাম করে করে পাকিস্তানীরা আমার যে সব জিনিস বিক্রি করেছিল তারও কিছু আমি ব্যক্তিগতভাবে ফেরৎ পেয়েছিলাম, স্বাধীনতার দশ পনের দিনের মধ্যে। তারপরে দশ, পনের বিশদিন একমাস পরে এমন একটা অবস্থা হয়ে গেল যে ফেরৎ দেওয়া দূরের কথা, পারলে আপনার ঘড়িটা খুলে নিয়ে যায় । এইরকম একটা অবস্থা হয়ে গেল, এটা কেন হল?
সেই সম্পর্কে আমার আবেদন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে যারা আসছেন তাদের কাছে, নেতৃত্ব আমাদেরকে দিতে হবে। এই তরুণদেরকে দুষ্কৃতকারী বলে দোষ দিলে চলবে না। ভাল মানুষও দুষ্কৃতকারী হয়ে যায়। যদি ভাল ছেলেদেরকে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে কাজ দিতে না পারেন। বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন। ৯ মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনারা দেখেছেন এই তরুণরা কি ভাবে সংগ্রাম করেছে।
তাদের পাশের ভাইটি প্রাণ দিয়েছে, সামনের ভাইটি পঙ্গু হয়ে শেরে বাংলা নগরে পড়ে আছে, একটা গুলি এদিক সেদিক হলে আজ যারা সশরীরে ভাল আছেন তারাও মারা যেতেন মৃত্যুর জন্য তারা তৈরি ছিলেন। নয় মাসে যুদ্ধ শেষ না হয়ে যদি নয় বছর লাগত এই তরুণরা সংগ্রাম করত, তাতে কোন সন্দেহ নাই। আজকে তারা যদি বিপথে গিয়ে থাকে তবে কেন গেল? আমাদের তা চিন্তা করে দেখতে হবে। আমার ভায়েরা দুই একটি কথা না বলে পারছি না। তরুণ সমাজ অদম্য শক্তির অধিকারী, এই শক্তিকে যদি সুষ্ঠু পথে পরিচালনা করা না যায়, তা হলে সেই শক্তিটা যদি বিপথে যায় বা উদ্দেশ্যবিহীন, লক্ষ্যবিহীন হয়ে যায় তবে অবস্থা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায় ।
একটা গল্প বলি, এক লোকের খায়েশ হয়েছে, যা খুশি তাই সে করতে পারবে এরকম একটা শক্তির তার দরকার। তখন সে বহু খুঁজে টুজে এক পীরের কাছে গেছে। পীরকে বলছে আমি এমন একটা ক্ষমতা চাই যার ফলে আমার যা ইচ্ছা হবে তাই যেন করতে পারি। পীর বলছে জিনিসটা বেশি ভাল হবে না। লোকটা বলে, না তবুও শিখান। তারপর পীর একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছে, পরিষ্কার ঘরে খালি মাটিতে বসে ৪০ দিন সেই মন্ত্র জপ করতে হবে। জপ করার পর এক দৈত্য আসবে। সেই দৈত্যকে তুমি যা বলবে মুহূর্তে সে তা করে দেবে। অবশেষে সেইমত মন্ত্রজপ করার পরে ঐ দৈত্য এসে হাজির হয়েছে। এদিকে পীর কিন্তু বলেছিল দৈত্যের শর্ত হল, যদি তাকে কাজ দিতে না পার তবে সে তোমার ঘাড় মটকাবে।
অতঃপর দৈত্য যখন এসে হাজির হয়েছে তখন কি বলবে? তাড়াতাড়ি সে বলে। যে, আনার জন্য একটা সাততলা বাড়ি বানিয়ে দাও সাথে সাথে দৈত্য বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। তখন বলে যে, একটা পুকুর কেটে দাও, সে তাই কেটে দিয়েছে। বলে যে, একটা শহর বানিয়ে দাও, তাই দিয়েছে, উপস্থিত বুদ্ধিতে । পরিকল্পনা টরিকল্পনা নাই। উপস্থিত বুদ্ধিমত যা মনে এসেছে, যা মুখে এসেছে তা বলেছে তারপর আর মনেও আসে না। তখন দৈত্য হাজির হয়েছে তার ঘাড় মটকাবে, তখন সে দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৈত্য ধার ধরে অবস্থা। এমন সময় পীর ধ্যান করে দেখতে পেল যে, শিষ্য মহাবিপদে।
তাড়াতাড়ি পীর শিষ্যকে পুনরায় উপদেশ নিলেন এবং বললেন যে, তোমার বাড়িতে যে কুকুরটা আছে দৈত্যকে সেখানে নিয়ে যাও এবং দৈত্যকে বল তোমাকে কিছু ঘি যোগাড় করে দিতে। উপদেশ মত লোকটি দৈত্যকে সেই নির্দেশ দিল, দৈত্য কুকুরের কাছে গেল এবং ঘি যোগাড় করে দিল । এবার পীর তার শিষ্যকে চূড়ান্ত নির্দেশ প্রদান করলেন। বললেন, শিষ্য এবার দৈত্যকে ঘি দিয়ে তোমার কুকুরের লেজ সোজা করতে বল, অতঃপর দৈত্য কুকুরের লেজ সোজা করতে লেগে গেল।
সে যতবার লেখ সোজা করে ততবার তা বাঁকা হয়ে যায় । অতএব কাজটি অনন্ত। এ কাজ শেষ হবার নয় । দৈত্যকে কাজ দেওয় গেল শিষ্যের মাথা বেঁচে গেল । পীর নিশ্চিন্ত হলেন। তেমনিভাবে আমাদের যুব শক্তিকে কাজ দিতে হবে। অন্যত তারা আমাদের ঘাড় মটকাবে। এটাতো খুবই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের নামে আমাদের দেশে ব্যবসা চলছে। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা না থাকার ফলে এ হচ্ছে । আজকে সমাজতন্ত্রের ঘোর বিরোধী, ধরে নেন বিদেশী রাষ্ট্রের চর, ধনতন্ত্রের চর, তার পক্ষে সমাজতন্ত্রে বিরোধিতা করে সামনে আসা সম্ভব না। সমাজতন্ত্রের নামেই আসতে হয়। কাজেই আজকে সমাজতন্ত্রের ে বিরোধী, বিদেশী রাষ্ট্রের চর, ধনতন্ত্রের চর, তাদের পয়সা খাওয়া লোক, তারাও দেখেছে বাংলার মানুষের মনোভার এমন- এটার বিরুদ্ধে বললে মানুষ পছন্দ করবে না। কাজেই পছন্দ না করার দরুন তার মুখেও সমাজতন্ত্রের স্লোগান।
শুধু সমাজতন্ত্রের শ্লোগান না, বঙ্গবন্ধুর থেকেও বেশি শ্লোগান দিয়ে দেয় তারা। মায়ের চাইতে মাসীর পরম বেশি হয়েছে। এটা কি রকম? যেমন, আমাদের সদরঘাটে কোন পকেটমার ধরা পড়লে সে কোনরকমে মাথা ফসকে দৌড় দেয় আর বলে, পকেটমার। পকেটমার। কারণ যাতে করে অন্য লোক বুঝতে না পারে যে সে পকেট মা আজকে CIA এর দালাল যারা তারাও বলে CIA, CIA, CIA তখন আপনারা বুঝতে পারেন না কোনটা আসল CA এই অবস্থা যে আজকে কিছু কিছু চলছে না একথা বলা চলে না। কাজেই এ থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে।
এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বলতে গেলে বলবেন যে, ধান বানতে শিবের গীত কেন গাইলেন? কোন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করা যায় না, যদি সামাজিক পরিস্থিতির একটা মোটামুটি স্থিতিশীলতা না থাকে। এবং সামাজিক পরিস্থিতি যদি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ করার উপযোগী না হয়। আজকে স্বাধীনতার সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক কাজেরও উপযোগিতা বিনষ্ট হয়েছে। আগে যা ছিল তা থেকেও বেশি বিনষ্ট হয়েছে। কেন হল তা আমি এই স্বল্পপরিসর সময়ে আলোচনা করতে চাই না। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিশ্চয়ই সেই সুযোগ আপনাদেরকে দেবেন।
আমি একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে এই সুযোগে দাবি করব, শুধু কেন্দ্রে বসে নয় জেলার জেলায় আমরা যাব, সেই কর্মসূচি নিতে হবে, সেই কর্মসূচি না নিলে চলবে না। আমরা মন্ত্রী নামক যে জীবগুলে আছি তাদের দুর্ভাগ্যের কথা শুনেন। আমাদেরকে মনে করা হয় যে মন্ত্রী হওয়া মানে ফাইল করা। মন্ত্রী হওয়া মানে কিছু তদবির টনবিরের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এটা যে মোটেও একটা স্বাধীন, উন্নয়নকারী প্রগতিশীল রাষ্ট্রের কর্তবা না। সেই কথাটি সকলকে বোঝাতে হবে। আজকে আমাদের যাঁরা বুঝতে না পারবে তাদের বোঝাবার দায়িত্ব আপনাদের আমাদের সকলের।
আজকে মন্ত্রীদের কাছে তারা যে সমস্ত কাজ নিয়ে যায় সেই কাজটি কিন্তু থানা পর্যায়েই হয়ে যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু মাঝে মধ্যে বলেন যে, “আমাকে তো তোমরা দারোগা বানাইয়া ছাড়ছ কোন থানায় কি হবে সেটাও বঙ্গবন কাছে । যদি হোম মিনিস্টার বলেন যে আমি একটু শুনি, জবাব আসে, না, না, আপনার সাথে কি কথা বলব, আমর বঙ্গবন্ধুর কাছে যাব। একেবারে সরাসরি। সংগঠনের ব্যাপারেও দেখেছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে সমস্য জেলার করা উচিত, থানার করা উচিত সেখানে না যেয়ে, সোজা কেন্দ্রে। তাও জেনারেল সেক্রেটারি না, অর্গানাইজি সেক্রেটারি না সোজা গণভবনে।
তারা হয়ত বঙ্গবন্ধুর দর্শন লাভের আশায় সেখানে যায়, কিন্তু তাতে দেশের বা ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যায় । কাজেই এই জিনিসগুলো আমাদের একটু চিন্তা করা দরকার। সেইগুলো চিন্তা করতে হয়ে সাথে সাথে আবার একটা প্রশ্ন এসে যায় স্থানীয় যে সমস্যা, সেই স্থানীয় সমস্যাগুলির বিবেচনা কি ভাবে করা যাবে। তারও তো একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
কোন জায়গায় গেলে এই সমস্যার কথাটা বলা যাবে, এর প্রতিকারের একটা নির্দেশ পাওয়া যাবে সেটাও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কাছে আমার দাবি- ভবিষ্যতে তারা যেন সেই ব্যবহ করেন। আমাদের কর্মীদের, আমাদের স্থানীয় নেতাদের যে স্থানীয় অসুবিধাগুলি রয়েছে সেই অসুবিধা বলার মা ফোরামের সরকার। সেই ফোরাম আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। সেই ফোরামের মাধ্যমে প্রয়োজন হলে সরকারে সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তা না হলে শুধু যদি কর্মীদের উপদেশ দেই যে, আপনারা আমাদের কাছে আসবেন না তাতেই সমস্যার সমাধান হবে না।
এবার আমি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আসছি । কলকারখানার কি অবস্থা হয়েছে তা খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং এবং সেখানে যে অল্পবিস্তর শিল্প আছে সে সব যারা দেখেছেন তাদেরকে কি বুঝিয়ে বলবার দরকার আছে? মোটেই না, কারণ অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে প্রত্যেকে আমরা স্বাধীন। কারো কাজ করার দরকার নাই। ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বলতে গেলে একটা কথা এসে যায়। গতকালেও এই কথাটি হয়েছে এবং আগে পরে সবসময় এই কথাটি হয়, সেটা হলো পারমিট লাইসেন্সের কথা।
সংমিশ্রিত অর্থনীতির কারণে কিছু পারমিট লাইসেন্সের ব্যবস্থা যখন এখনও আছে তখন একজনকে না একজনকে এটা করতে হবে, যতদিন পর্যন্ত পারমিট প্রথা উঠিয়ে দেওয়া না যায়। এই ক্ষেত্রে এটা কমিয়ে আনার জন্যে টিসিবি নামক যন্ত্রটির হাতে কিছু ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন টিসিবি জিনিসটা কী? সেখানে আমাদের যে কর্মচারিরা রয়েছে এই প্রসঙ্গে বলি ভাইয়েরা একটা কথা নির্লিপ্তভাবে মনে করতে হবে দোষত্রুটি যদি কারো থাকে সমষ্টিগতভাবে যদি দোষী হয়, সমন্নিগতভাবে নিশ্চয়ই তাদেরকে আমাদের ধরতে হবে। প্রতিকার করতে হবে ।

প্রয়োজনবোধে তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে কিন্তু ঢালাওভাবে যদি আমরা বলি, ঢালাওভাবে বললে কাজের অসুবিধা হয়। আর সরকারী কর্মচারি কারা? এখানে যারা আছেন, জিজ্ঞাসা করে দেখুন নিজেদের মনকে, কোন না কোন সরকারী কর্মচারি হয় আপনার ছেলে, না হয় আপনার বড় ভাই, না হয় ছোট ভাই, না হয় মামা, হয় ভাগিনা, না হয় চাচা, না হয় ফুপা, না হয় খালু ।
আজকে বাংলাদেশ ছোট দেশ, জনসংখ্যা অনেক বেশি। আজকে আমি আপনাদেরকে নাম উল্লেখ না করেই বলছি, একজন দারোগাকে আমি জানি স্বাধীনতার সময় মানুষ হত্যা করিয়েছে। কিন্তু সেই দারোগার চাকুরি ডিসমিস করা গেল না। কেন গেল না? সেই দারোগার পক্ষে আমাদের অনেকেই ছিলেন। মাফ করবেন, আমি মন্ত্রী বলে যে, মন্ত্রীদের বাঁচাচ্ছি, তাও না। মস্তিত্বের বাইরে যারা উচ্চ পদস্থ নেতৃত্ব আছে তারা Protection দিয়ে রেখেছে।
একটা নয়, এরকম বহু ঘটনা আপনাদেরকে দেখাতে পারি। কিন্তু এখানে আমরা অনেক লোক বসে আছি, সময়ও নাই, তবুও আপনাদেরকে কয়েকটি ঘটনা একটা একটা করে দেখাই যে, এই এই অফিসার এই এই কাজ করেছিল হাকিম হুকুম দিয়েছিল, খবর দাও, কান ধরে নিয়ে এসেছিল। সেই অফিসার আমাদের কারুর না কারুর আত্মীয় স্বজন। একজন সাজা দিতে চাইলে, পাঁচজন তার বিরোধিতা করে। আমি নিজে দুই একজায়গায় গিয়ে দেখেছি। তার মধ্যে একজায়গার কথা বলি, আমাদের এক অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এল।
অভিযোগের অন্য যখনই পাঁচজন নেতাকে নিয়ে হুকুম দিলাম ( এসডিও না ডিসিকে তা আর পরিষ্কার করে বলছি না, কারণ যারা যা জানেন তারা বুঝে যাবেন)- এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । দুই ঘন্টা পরেই আর দশজন এসে বলছে যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তার মত ভাল মানুষ হয় না। ও আওয়ামী লীগের সাংঘাতিক উপকার করে, এখন বলুন কি করবেন?
আমি যখন গত বছর একসময় রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে কয়েকজন বলেছিলেন, সে আমাদেরই কর্মী ছিল, তারা লাইসেন্স টাইসেন্স নিয়ে দু’পয়সা বানিয়ে এখন অন্য রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়েছে নামটা আমি বললাম না। তাদের কথা অত প্রচার করতে চাই না। আর এমন অনেক জায়গায় আছে, দিনে আওয়ামী লীগ করে রাতে অন্য দলের সাথে যোগ রাখে।
এই বর্ণ চোরদেরকে আপনাদের ঠিক করতে হবে। এটা যদি করা না যায় তবে, অসম্ভব কিছু করা যাবে না। মনে রাখবেন একটা দেশ চালাতে হলে তার সরকার কোনদিনই EFFECTIVE হবে না যদি না, তার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থাকে আপনার নিজের দলের ভেতরে স্থানীয়ভাবে যদি কোন্দল থাকে, তবে বিপর্যয় আপনারা নিজেরা ভোগ করেন, কিন্তু আমরাও সেই সাথে কম শাস্তি ভোগ করি না ।
আমার আওয়ামী লীগ যদি দুর্বল হয়ে যায় আমি মন্ত্রী, এই যে পতাকাটি উড়িয়ে যাই, বিভিন্ন ঘটনায় আমি লজ্জাবোধ করলে এই পতাকাটি হয়ত একটা টিটকারি হয়ে যাবে। টিটকারি হবে তখন যখন আমার আওয়ামী লীগ দুর্বল হবে। যখন আওয়ামী লীগ দুর্বল হবে না তখন কেউ টিটকারি দিতে সাহস পাবে না। যদি কোন ব্যক্তিবিশেষকে, কোন মন্ত্রীকে আপনাদের অপছন্দ থাকে, আপনারা বঙ্গবন্ধুর কাছে আসুন, আপনাদের সংগঠনের কাছে আসুন, এসে বলুন তার সম্বন্ধে।
সেই মন্ত্রী কোন উত্তরাধিকার সূত্রে পৌত্র-পৌত্রাদির ওয়ারিশানক্রমে ভোগ দখলের জন্য মন্ত্রিত্বে আসেনি। তাকে সরিয়ে দেবার অধিকার আপনাদের আছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তাকে মস্তিত্বেও রাখবেন আবার গালিগালাজও দিবেন তাহলে পরিণামে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লিফলেট বের হয়। যে অমুক তো চোর? আওয়ামী লীগের লোকেরাই বলছে। ওমুক Permit Hunter, আওয়ামী লীগাররাই বলেছে।
আর রিলিফ কমিটি। এই রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে আমার খুব ভাল ভাল কর্মী দোষের ভাগী হয়েছে, কিন্তু সবাই দোষী ছিল না। কিছু কিছু দোষী ছিল হয়ত, সব দোষী ছিল না। আমি জানি বিভিন্ন গ্রামে আমার কর্মী যারা আছেন আপনারা যদি টাকা দিয়ে থাকেন, এক টাকার সাথে আরও চার আনা তার নিজ পকেট থেকে খরচ হয়েছে আমাদেরকে বাংলার একটা চরিত্রের কথাও চিন্তা করতে হবে। বাংলা সমস্যাসংকুল দেশ এবং সমালোচনামুখর দেশ।
এখানে আমি হলফ করে বলতে পারি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় এক জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধুর অনুমতি নিয়ে ঘোষণা করব যে পাঁচ হাজার টাকা এক গ্রামের লোকজনের মধ্যে বিতরণ কর হবে। সেই টাকা সবচাইতে ভাল কর্মীটির হাতে দিবেন। সেই কর্মী এর সাথে আরও পাঁচ হাজার টাকা যোগ দিয়ে মোট দশ হাজার টাকা যদি খরচ করে তারপরও কিছু কিছু লোক বলবে যে, টাকা পয়সা বাটা হলদি’, এটা হাতের
মধ্যে পড়লে কি কিছু লাগে নাই। এই হল বাংলাদেশের চরিত্র। আপনি নিজের পয়সা খরচ করে দশটা গরু জবাই করে অথবা ৫০টা খাসি জবাই করে একটা মেজবানি (দাওয়াত) খাওয়ান-লোকজন মেজবানি খাওয়ার পরে বাড়ি যাবে আর রাস্তায় রাস্তায় গল্প করবে। একজন আর একজনকে জিজ্ঞাসা করবে যে, কি, কেমন খেলে?
৫ জন বলবে, খুব খেলাম, ভালই হয়েছে। অন্যজন বলবে, না, এই তরকারিটায় একটু পোড়া পোড়া গন্ধ লেগেছে। আর একজন বলবে আরে শালার নিয়তই ভাল ছিল না, ভাল হবে কেমনে? যিনি খাওয়ালেন, হাজার হাজার পয়সা খরচা করলেন, তিনি রাখেনও নাই, বাবুর্চিও তিনি না, সব নিয়ে দিলেন, তারপরেও কিছু লোক বলবে ওর নিয়ত ভাল ছিল না তাই একটু পোড়া লেগে গেছে, তরকারিটা একটু প হয়ে গেছে। কাজেই এই স্বভাবটা আমাদের আছে, এই স্বভাবটা ভুললে চলবে না। এই স্বভাব পরিবর্তনের দায়িত্ব আপনাদের সকলের সেই সাথে আমাদেরও একইভাবে ।
আজকে যারা রিলিফ কমিটির কথা বলছেন, কি ছিল আপনার গ্রাম পর্যন্ত? গ্রাম পর্যন্ত সংগঠনটা কোথায় ছিল স্বাধীনতার পরে, একটু ভেবে দেখুনতো! এই এমসিএ আর রিলিফ কমিটি ছাড়া অন্য কোন সরকারী সংগঠন তখন ছিল না। তারাই কাজ করেছেন, সাধ্যানুযায়ী কাজ করেছেন। আমি মনে করি এমনিভাবে দলের জন্য উৎসর্গীকৃত মনোভাবাপন্ন আমাদের অনেক কর্মীকে তৈরি হতে হবে। যেটা সত্যি সেটা করতে হবে। তাতে যদি অপ্রিয়তা আসে পাঁচ বৎসর যদি নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পারি, তাতে কিছু আসে যায় না।
আমরা মুসলিম লীগ নই যে, ইলেকশনে হেরে গেলে বিরোধী দলে না বসে ঐ দল ছেড়ে দিয়ে নতুন দল বানাব। একদল ভেঙ্গে পাঁচ দল বানাব। গণতন্ত্রের মূল কথা হল আমি যদি জনগণকে সাথে নিতে না পারি, আমার দোষের জন্যই হোক বা জনগণের বোঝার জন্যই হোক, যে জন্যই হোক, যদি সাথে নিতে না পারি জনগণ আমাকে যদি না চায় তবে আমি নির্দ্বিধায় বিরোধী দলে বসব।
অর্থাৎ বা হাতের দিকে বসে যাওয়া এবং জনসমর্থন যারা পাবে তাদেরকে ডান হাতের দিকে বসতে দেওয়া। এটা হল গণতন্ত্রের একটি মূল কথা, যে গণতন্ত্রকে আমরা সংবিধানে রেখেছি । কাজেই আজকে আমাদের এই নীতিগুলোকে মনে রাখতে হবে । যেটা আজ কোনভাবেই আমরা মনে রাখতে চাই না ।
অর্থনীতির কথা যদি বলেন, আমাদের অনেক দুর্যোগ ছিল। অনেক অভাব আছে। বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব চিরকালই ছিল। সবসময় আমদানি হত। বাংলাদেশে কাপড়ের অভাব চিরকাল ছিল। আপনারা বলবেন, কাপড়ের অভাব ছিল এটা আপনি কি বলেন, এতদিনতো আমরা অভাব বোধ করিনি। আমি দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখাচ্ছি।
দু’একটা কথার বেশি বলতে পারব না। পরে দরকার হয় সেমিনার করেন। আমি আওয়ামী লীগকেও পরামর্শ দেব। কালচারাল সেক্রেটারি যিনি হবেন, দেশের অর্থনৈতিক ইস্যুর উপর সপ্তাহে না হলে পনর দিনে একটা সেমিনার করবেন বিভিন্ন BURNING PROBLEM এর ওপর। যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে সেখানে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ম উপস্থিত থাকবেন। মাঝে মাঝে একাধিক মন্ত্রীও থাকবেন, এটা করতে হবে ।

প্রথমেই ধরুন ঔপনিবেশ কাকে বলে, ঔপনিবেশ জিনিস কি? ঔপনিবেশের সোজা কথা হল, একটা বিদেশী শাসন যে শাসন শুধু সাম্রাজ্যবাদী কায়নায় শাসন করেই ক্ষান্ত নয়, যারা নিজের দেশে FINISHED PRODUCTS তৈরি করার জন্য ঔপনিবেশের কাঁচামাল নিয়ে যাবে। ঔপনিবেশে সংগৃহীত মূলধন নিয়ে যাবে। এই হল ঔপনিবেশের মূল চরিত্র । বাংলাদেশ আর পাকিস্তান যখন একত্রে ছিল তখন বাংলাদেশকে তারা বাজার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
এই বক্তৃতা শুধু বঙ্গবন্ধু না আপনারা সকলেই করেছেন। দু’বৎসরের মধ্যে সেটা যদি কেউ ভুলে গিয়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই আপনাদের দায়িত্ব তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া । একটা উদাহরণ দিচ্ছি- পাকিস্তান যখন হয়েছিল ১৪ আগ ১৯৪৭ সন । সেদিন পূর্ব-বাংলায় আজকের বাংলাদেশে কাপড় ও সুতাকলের সংখ্যা ছিল আর্ট। পাকিস্তানের ২৮ বৎসরের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান শুধু কাপড় ও সুতায় স্বয়ংসম্পূর্ণই হয় নাই, তাদের সুতার বাজার বাবুর হাট, মাধবদি, শাহজাদপুর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল।
ঐ মমিন নগর থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে আমার জাতী ভাইদের সুতা আসত পাকিস্তান থেকে, তারা এখানে বাজার করেছিল, সুতার কল এখানে হয় নাই। ১৯৪৭ পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল মাত্র দুটো সুতা এবং কাপড়ের কল- তাওয়ালপুরে একটা আর একটা করাচী এলাকায়।
দুটোই ছিল ওদের আর তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে আপনার জায়গায় বাজার বানিয়েছে। বাজার বানাবার ফলে পাকিস্তানের যে কাপড় আপনার এখানে আসত, আপনার যা চাহিদা, তার জন্য আপনাকে কিছু কিছু সুতা দিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেয় নাই । আজকে পাকিস্তানের সাথে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছি, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি।
আরও দেখুনঃ