হেমচন্দ্ৰর কর্মক্ষেত্র

হেমচন্দ্ৰর কর্মক্ষেত্র – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “হেমচন্দ্ৰ হেমু” বিভাগের একটি পাঠ। এদিকে পিতার কাজকর্ম সামলাচ্ছেন হেমচন্দ্র, আর ওদিকে শের খাঁ ভারতের ছত্রপতি হওয়ার সাধনায় অনেকখানি এগিয়ে গেছেন, সহসরামে নিজের রাজধানী স্থাপন করেছেন। শের খাঁ গুণী ব্যক্তির জহুরী ছিলেন। সর্বদা তার অনুসন্ধানে সচেষ্ট ছিলেন।

হেমচন্দ্ৰর কর্মক্ষেত্র

হেমচন্দ্ৰর কর্মক্ষেত্র | হেমচন্দ্ৰ হেমু | আকবর

 

 

হেমচন্দ্র কি তাঁর দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারেন? তিনি হেমচন্দ্রকে ডেকে এনে তাঁর হাতে নিজের কোষাগারের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। তিনি জানতেন, যে কোনো ভোজপুরীর তুলনায় হেমচন্দ্রের রণনৈপুণ্য কম নেই। তবু রাজ্যের জন্য কোষাগারের প্রয়োজনীয়তাও তো সৈন্যের চেয়ে কিছু কম নয়।

হেমচন্দ্র এমন দক্ষতার সঙ্গে কোষাগারের বন্দোবস্ত করেন যে শেরশাহের বড় বড় যুদ্ধেও তাঁর কোষাগার কখনো শূন্য হয়নি। হুমায়ূনের পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে শেরশাহ কনৌজ, দিল্লী, এমন কি রাজস্থানের মরুভূমি পর্যন্ত পৌছেছিলেন। সৈন্যরা এ মাসের বেতন পরের মাসে পাবে, এটা তিনি কখনো বরদাস্ত করতেন না। আর হেমচন্দ্রের ছিল কুবেরের ভাণ্ডার। কোষাগার কি কখনো খালি হতে পারে? তাঁর

নিজের কর্মদক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে হেমচন্দ্র শেরশাহের অতীব বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠেন। তিনি শেরশাহের সমস্ত সাফল্যকে নিজের সাফল্য বলে মনে করতেন। শেরশাহ মুসলমান ছিলেন আর হেমচন্দ্র ছিলেন হিন্দু, কিন্তু উভয়েই নিজেদের এক দেশ, এক আদর্শের সন্তান বলে ভাবতেন। 

 

হেমচন্দ্ৰর কর্মক্ষেত্র | হেমচন্দ্ৰ হেমু | আকবর

 

শেরশাহ উদার হৃদয়ে হিন্দুদের যথোচিত মর্যাদা দান করেছিলেন, শত শত বছর ধরে চলে আসা ভেদাভেদকে নিজের শাসনব্যবস্থায় বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেন নি, সেই কারণে সকল হিন্দু তাঁর ভক্ত ছিল ভোজপুরীরা তো তাঁকে নিজেদের মতোই ভোজপুরী মনে করত । আর সেজন্য তাদের সঙ্গে তাঁর বিশেষ আত্মীয়তাও গড়ে উঠেছিল। যদি কোম্পানির সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে ভোজপুরী সৈন্যরাও কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত পৌঁছে থাকে, তাহলে সেটা তার চারশত বছর পূর্বের শেরশাহের আমলের পুনরাবৃত্তি করেছিল মাত্র ।

১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে শের খাঁ শেরশাহ নাম ধারণ করে গৌড়ের সিংহাসনে আরোহ করেন। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ূন ভারত থেকে পলায়ন করেন। হুমায়ূনের পলায়নে অল্প দিন পরেই শেরশাহ বাংলা থেকে সিন্ধু পর্যন্ত বিশাল ভূখণ্ডের সম্রাটের স্বীকৃ লাভ করেন। সেখানেই তাঁর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানেই সম্প্রীতি ও সু শান্তি স্থাপিত হতে বিলম্ব হয়নি। মাত্র পাঁচ বছর শেরশাহের শাসনব্যবস্থায় থাক সৌভাগ্য হয়েছিল ভারতের। কালিঞ্জরে অকস্মাৎ বারুদে আগুন লেগে তাঁর এ বিয়োগ হয় । দিল্লী নয়, সহসরামই ছিল তাঁর কাছে বেশি প্রিয়, একথা সকে জানত। সেজন্য তাঁকে সহসরামে এনে সমাধিস্থ করা হয়। 

মাঝখানে তাঁর বিশাল সমাধির অভ্যন্তরে তিনি আজও নিদ্রিত রয়েছেন, যিনি আকবরকে পথ-প্রদর্শন করেছিলেন। আকবর যদি কিছু কিছু ব্যাপারে কৃতিত্ব দেখিয়ে থাকেন, তাহলে অনেক অনেক ব্যাপারেই কৃতিত্ব শেরশাহের।

 

 

হেমচন্দ্ৰর কর্মক্ষেত্র | হেমচন্দ্ৰ হেমু | আকবর

 

ইসলাম শাহ:

শেরশাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইসলামশাহ সিংহাসনে বসেন। তাঁর নয় বছরের (১৫৪৫-১৫৫৪ খ্রিঃ) শাসনকালে শেরশাহের শাসনব্যবস্থাই অনুসৃত হয়, সেই রকমই হিন্দু-মুসলমানে কোনো ভেদ ছিল না। যোগ্যতার মর্যাদা দেওয়া, প্রজাদের সন্তুষ্ট রাখাই ছিল শাসনের মূলমন্ত্র। এই সময়কালে হেমচন্দ্র আরও বেশি নিজের বিচক্ষণতা দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। 

আগে শেরশাহের ছায়ায় তাঁকে তত দীপ্যমান দেখাত না, আর এখন তিনি শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে বড় স্তম্ভ। কেবল ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থাতেই নয়, এমন কি সামরিক কূটকৌশলেও তাঁকে অসাধারণ বলে গণ্য করা হতো। হেমচন্দ্রের সহায়তা ব্যতীত কোনো কাজ সম্পূর্ণ করার কথা ভাবাই যেত না। ইসলামশাহ তাঁর পিতার এই যোগ্য অমাত্যটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment