আকবরের আমলের বাস্তুশিল্প – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “শিল্প ও সাহিত্য” বিভাগের একটি পাঠ। আকবরের আমলে নির্মিত অট্টালিকাদি সিক্রীতে আজও দেখতে পাওয়া যায়। সেই সব অট্টালিকাদির বিষয়ে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি (দ্রঃ ৫ম অধ্যায়)। আকবরের বাস্তু- শৈলীতে হিন্দু-মুসলিম স্থাপত্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে। আকবরই সর্বপ্রথম হিন্দু শৈলীকে উদার মনে গ্রহণ করা চেষ্টা করেছিলেন।
আকবরের আমলের বাস্তুশিল্প
সিক্রীর মসজিদের ‘বুলন্দ দরওয়াজা’ আকবরী ইমারতের খুব সুন্দর একটি নিদর্শন। সেখানকার দীওয়ান খাস, বীরবল মহল, যোধাবাঈ মহলও অত্যন্ত দর্শনীয়। এইসব সৌধ ১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়। তার আগেই নির্মিত হয়েছিল নগর চৈন, কিন্তু তার অবশেষ দু’ একটি মসজিদ ব্যতীত আর কিছুই থাকেনি।
দিল্লীতে হুমায়ূনের স্মৃতিসৌধ আকবরী স্থাপত্য-শিল্পের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত । এটির নির্মাণ-কার্য ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে সমাপ্ত হয়েছিল। এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণে সমরকন্দের তৈমূরের সমাধি ও তাঁর দ্বারা নির্মিত বিবিখানমের (নির্মাণকাল ১৪০৩ খ্রিঃ) প্রভাব রয়েছে।
সিক্রীতে শেখ সলীম চিশতীর সমাধি যদিও তৈরি করান আকবর, তবুও তার বহু পরিবর্তন সাধন করেন জাহাঙ্গির। হুমায়ূনের স্মৃতিসৌধের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই তার থেকে সামান্য দূরেই আব্দুর রহীম খানখানার স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়, সেটি জাহাঙ্গিরের আমলের ইমারত। মানসিংহ বৃন্দাবনে গোবিন্দরাজের মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন, অবশ্য তা কোনোদিনই সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, সেটিকে আকবরী কালের খাঁটি হিন্দু শিল্প বলা উচিত ।
আজমেরেও আকবর কয়েকটি ইমারত নির্মাণ করিয়েছিলেন এবং সেখানকার তারাগড় দুর্গের অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন। অটকে আকবর স্বহস্তে দুর্গের ভিত্তি- স্থাপন করেন ৯৯০ হিজরীতে (১৫৮২ খ্রিঃ)। এসব ছাড়াও আকবর বহু সরোবর-পুষ্করিণী খনন করিয়েছিলেন।
আকবরের শিবির ও শামিয়ানাও ভ্রাম্যমাণ বাস্তুশিল্পের নিদর্শন হয়ে উঠত। যে-তাঁবুতে তিনি নিজে অবস্থান করতেন, তাকে বারগাহ্ বলা হতো। তাতে ৪৮ হাত লম্বা ও ২৮ হাত চওড়া ৫৪টি কক্ষ থাকত, তার মধ্যে দশ হাজার লোক উপবেশন করতে পারত । সমস্ত আসবাব আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে থাকত এবং এক হাজার ফরাশ এক সপ্তাহের মধ্যেই কাঠামোটিকে দাঁড় করিয়ে বাসোপযোগী করে দিত।
অন্যান্য আমির-অমরাহদেরও সভ্য-ভব্য শিবির হতো। বেগমদের পৃথক ভ্রাম্যমাণ হরমসরা (অন্তঃপুর) থাকত, তা সুসজ্জিত করতে বহুমূল্য বস্ত্র ও কার্পেট ব্যবহৃত হতো । আশিয়ানা মঞ্জিল, জমিনদোজ (পাতালঘর), আজায়েবী মণ্ডলু অঠখম্ভা, খরগাহ, সরাপর্দা গলিমী, দৌলতখানা, খাস কলন্দরী, দীওয়ানখানা আম, নক্কারখানা ইত্যাদি কত যে ভ্রাম্যমাণ বাড়ি হতো। মধ্যখানে একটা আকাশ-প্রদীপও উপরে তুলে দেওয়া হতো। শৌচাগারকে বলা হতো সেহতখানা১ । এই অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ বাড়িগুলি হতো খুব চমৎকার ।
আরও দেখুনঃ