Site icon History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GDCN

আকবরের শিক্ষা | প্রারম্ভিক জীবন | আকবর

আকবরের শিক্ষা | প্রারম্ভিক জীবন | আকবর

আকবরের শিক্ষা, আকবর আজীবন নিরক্ষর ছিলেন। প্রথানুসারে চার বছর চার মাস চার দিন পরে আকবরের বিদ্যারম্ভ শুরু হল, মোল্লা আসামুদ্দীন ইব্রাহিমের শিক্ষক হওয়ার সৌভাগ্য হল। কিছুদিন পরে যখন পাঠ শোনার পালা এল, তখন দেখা গেল, কিছুই অগ্রসর হয়নি।

আকবরের শিক্ষা | প্রারম্ভিক জীবন | আকবর

 

 

হুমায়ূন ভাবলেন, মোল্লার উদাসীনতার জন্যই পুত্র পড়াশোনা করছে না। লোকেও তাতে সায় দিল— “মোল্লার পায়রা ওড়ানোর খুব শখ। ছাত্রকেও পায়রা- ওড়ানো খেলায় লাগিয়ে দিয়েছেন।” তারপর মোল্লা বায়জিদ শিক্ষক হলেন, তাতেও কোনো ফল হল না। কাগজে দুই পুরনো মোল্লার নাম ছাড়াও মৌলানা আব্দুল কাদিরেরও নাম লিখে সুর্তি-খেলা হল, তাতে ঘটনাচক্রে মৌলানার নাম উঠে এল । তিনিও কিছুদিন পড়ান। কাবুলে থাকতে আকবর পায়রা ও কুকুর নিয়ে খেলায় ব্যস্ত থাকতেন, পড়াশোনার অবসরই পেতেন না।

ভারতে এলেন, তবুও তাই। বৈরাম খাঁর সচিব মোল্লা পীর মুহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হল। কিন্তু কোনো ফল হল না। কখনো ইচ্ছে হলে মোল্লার সামনে বই নিয়ে বসতেন, এই মাত্র। ৯৬৩ হিজরীতে (১৫৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে) মীর আব্দুল লতিফ কজয়িনীও ভাগ্য-পরীক্ষা করেছিলেন। ফারসি মাতৃভাষার মতোই, সেজন্য ভালো কেতাবি ফারসি আকবর কথাবার্তায় রপ্ত করেছিলেন। কজয়িনীর সামনে দীওয়ান হাফিজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু অক্ষরের সঙ্গে যেখানে সম্পর্ক, সেখানে আকবর নিজেকে নিষ্কলঙ্ক রেখেছিলেন। কিছুদিন আঁক টেনেছিলেন সত্যি, কিন্তু পুস্তকের পৃষ্ঠায় নজর পড়লেই তাঁর মুখভাব বিবর্ণ হয়ে যেত।

অক্ষরজ্ঞানের অভাব হেতু আকবর অশিক্ষিত ছিলেন, এটা ধরে নেওয়া ভুল, প্রাচীনকালে যখন লিপি আবিষ্কার হয়নি, তখনও আমাদের ঋষিরা চোখের সাহায্যে নয়, কান দিয়ে পড়াশোনা করতেন। সেজন্য সংস্কৃতে জ্ঞান শব্দের অর্থ শ্রুত এবং আজও মহাজ্ঞানীকে বলা হয় বহুশ্রুত। আকবর বহুশ্রুত ছিলেন।

 

 

তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল দেবদত্ত, শোনা কথা খুব তাড়াতাড়ি মনে কতে পারতেন। হাফিজ, রুমী প্রভৃতি কবির বহু কবিতা মুখস্থ বলতে পারতেন। সব সময় সঙ্গে থাকত পুস্তক-পাঠক। ফারসি পুস্তক-পাঠ বুঝতে কোনো অসুবিধে হতো না, আরবি পুস্তকের অনুবাদ (ফারসি) যে সংস্কৃতেও এরকম পুস্তক আছে, তখন তিনি সেগুলো শোনার জন্য উৎসুক হয়ে ওঠেন, ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ ইত্যাদি বহু পুস্তক নিজের শোনার জন্য ফারসিতে অনুবাদ করান।

‘মহাভারত’ ‘শাহনামা’র সমতুল্য মনে করে তিনি ‘মহাভারত’ অনুবাদের জন্য এতই অধীর হয়ে ওঠেন যে সংস্কৃত পণ্ডিতের অনুবাদ শুনে তিনি নিজেই তা ফারসিতে অনুবাদ করে যেতেন, লিপিকর তা লিখে নিতেন। সময়াভাবের দরুন এ কাজ খুব বেশিদিন চালানো সম্ভব হয়নি। অক্ষরক্ষান অর্জনের পরিবর্তে তিনি তাঁর যৌবন ক্রীড়া-কৌতুক ও শারীরিক-মানসিক সাহসের কাজে ব্যয় করেছিলেন।

 

 

চিতাবাঘ দিয়ে হরিণ শিকার, কুকুর-পালন, হাতি-ঘোড়ার দৌড় তাঁর খুব প্রিয় ছিল। কারো পক্ষে কোনো হাতি বশে আনা সম্ভব না হলে তিনি নিজে তাকে বশীভূত করতেন এবং সেজন্য তিনি জেনেশুনে বিপদের ঝুঁকি নিতেন । 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version