আজকে আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতিহাসের রূপরেখা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাস অংশটি দলিলপত্রের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক। যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য দ্বিতীয় পত্রে আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস না দিয়ে একটি রূপরেখা তুলে ধরলাম। আগ্রহী পাঠক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসটি প্রথম খণ্ডে পাঠে জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতিহাসের রূপরেখা
- ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন। আহ্বায়ক- নঈমউদ্দিন আহমদ স্থান- ফজলুল হক হল ।
- ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম ধর্মঘট। শেখ মুজিবুর রহমানসহ তৎকালীন ছাত্রনেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ।
- ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পূর্ব বাংলা সফরে এসে জিন্নাহর উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা” ঘোষণা। এই ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ।
- ১৯৪৯ : টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুল হকের জয় লাভ মুসলিম লীগে ভাঙনের সূত্রপাত।
- ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ।
- ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কেএম দাশ লেনে অবস্থিত হুমায়ূন সাহেবের বাসভবন রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ। প্রথম সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
- ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া সংবিধানের মূলনীতি বিরোধী আন্দোলন।

- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে ১৯৫১ সালে নিখিল পাকিস্তান জিন্নাহ আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা। সভাপতি মানকি শরীফের পীর এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক ওসমানী।
- ১৯৫১ সালের ১১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত।
- ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন; কারাবন্দি শেখ মুজিবের নির্দেশনা। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সিদ্ধান্তে ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ। রফিক, শফিক, বরকত, সালাম, জব্বার প্রমুখ পুলিশের গুলিতে শহিদ ।
- ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল বামপন্থি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত ।
- ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে লাহোরে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক জিন্নাহ আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিনিধিদের যৌথ সম্মেলন। সম্মেলনে শর্তসাপেক্ষে দুই দল একীভূত হয়ে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
- ১৯৫৩ সালে কমিউনিস্ট ও বামপন্থিদের উদ্যোগে গঠিত হয় গণতন্ত্রী দল।
- ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত।
- ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২১-দফা প্রণয়ন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়। ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ। ১৫ মে আওয়ামী লীগসহ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত। আদমজীতে দাঙ্গার অজুহাতে ৩০ মে ৯২(ক) ধারা জারি এবং যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত । তীব্র দমননীতি।
- ১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত। এই কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ।
- ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব বাংলায় আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা গঠন ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের কেন্দ্রে সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন।

- ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দলে প্রকাশ্য মতবিরোধ। কাগমারী সম্মেলনের পর ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট পদত্যাগপত্র পাঠান। অন্যদিকে ১৯৫৭ সালের ১৩ ১৪ ঢাকার শাবিস্তান হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আহ্বান করা হয়। এই কাউন্সিলে ভাসানীর পদত্যাগপত্র নিয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু গৃহীত হয় না। দল থেকে পদত্যাগ করলেও কাউন্সিল ভাসানীকেই সভাপতি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
- ১৯৫৭ সালের ২৫-২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক কনভেনশনে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন।
- ১৯৫৭ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে মার্শাল ল’ জারি। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ । শেখ মুজিবসহ নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার । ২৭ অক্টোবর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার অপসারণ, জেনারেল আইউব খানের ক্ষমতা দখল ।
- ১৯৫৯ সালের ৭ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের মুক্তিলাভ গোপনে সহকর্মীদের কাছে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন শেখ মুজিব।
- ষাটের দশকের শুরুতেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ নেতাদের গোপন নিউক্লিয়াস গঠন। শেখ মুজিবের অনুমোদন ।
- ১৯৬১ রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগ। রবীন্দ্রসংগীত প্রচারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ।
- ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি । সামরিক শাসন শিথিল। ১৯৬২ সালের ৪ অক্টোবর অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আলাদাভাবে পুনরুজ্জীবিত না করে ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- এনডিএফ নামে একটি ঐক্যবদ্ধ জোট গড়ে তোলে ।
- ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সোহরাওয়ার্দীর আকস্মিক মৃত্যুর পর এনডিএফ কার্যকারিতা হারায়।
- ১৯৬৪ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা। এই সভায় দল পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে মোড় পরিবর্তন ।
- ১৯৬৪ সালের ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকার হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ ও শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে বহাল।
- ১৯৬৪ সালে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট-বিরোধী আন্দোলন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দাঙ্গার বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ব্যাপক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ইত্তেফাকে প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ১৯৬৪ ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ এবং দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে একই শিরোনামে একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়- যা সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে ব্যাপক মানবিক আবেদন সৃষ্টি করে।

- ১৯৬৪ সালে বুনিয়াদি গণতন্ত্রের নামে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি বা সম্মিলিত বিরোধী দল- ‘কপ’ গঠন আইউব খানের বিরুদ্ধে মহম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহকে ‘কপ’-এর প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নদান। এই পরোক্ষ নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পরাজয়। সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি জোরদার।
- ১৯৬৪ সালের ৫ জুন আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ‘দুই অর্থনীতি তত্ত্বের আলোকে ১১-দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১১-দফা দাবি কার্যত ভবিষ্যৎ ৬-দফা দাবিরই ভিত্তি রচনা করে।
- ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ পূর্ববাংলা পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন।
- ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি সনদ ৬-দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন।
- ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিল ৬-দফা অনুমোদন করে। শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন। সারা বাংলায় শেখ মুজিবের ঝটিকা সফর গ্রেফতার, মুক্তি আবার গ্রেফতার ।
- ১৯৬৬ সালের ৮ মে আইউব সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে জামিন অযোগ্য নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে। একই সঙ্গে গ্রেফতার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদসহ বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে। ৭ মে থেকে ১০ মে-র মধ্যে সারাদেশের সাড়ে ৩ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ইতোমধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির পূর্ব নির্ধারিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬-দফা দাবিতে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে। সর্বাত্মক হরতালে রাজধানীসহ সারাদেশ অচল হয়ে পড়ে। পাশব হিংশ্রতা নিয়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হরতালে ঢাকার রাজপথ শ্রমিক-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয়। শ্রমিক মনু মিয়াসহ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়।
- ১৯৬৬ সালের ৭ জুনের হরতালের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে বহুমুখী আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। ১৩ জুনের মধ্যে আওয়ামী লীগের তৃতীয় সারির নেতারাও গ্রেফতার হয়ে যান। ৬-দফার সমর্থক দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে ১৫ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। ১৬ আগস্ট ইত্তেফাক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
- ১৯৬৬ সালের ১৯ আগস্ট আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিল অধিবেশন হয়। নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য নয় বরং দলকে চাঙ্গা রাখার জন্যই এই কাউন্সিল ডাকা হয়েছিল। কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে ৬-দফায় প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ।
- ১৯৬৭ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আহ্বান করা হয়। কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে একটি নতুন কমিটি গঠিত হয় ।
- ১৯৬৮ সালের ১৯ ও ২০ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় । এই কাউন্সিল নেতা-কর্মীদের ভয়-ভীতি কাটাতে এবং নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। চরম বৈরী পরিবেশেও আওয়ামী লীগ তার কোনো দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল স্থগিত বা সাংগঠনিক কার্যক্রম যে বন্ধ রাখে নি, এ কাউন্সিল সেটিই প্রমাণ করে ।
- ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব গং’ তথা আগরতলা মামলা দায়ের। শেখ মুজিবকে ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তর। বিচার শুরু।
- আইউব-বিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদ ৬-দফা ভিত্তিক ১১-দফা দাবিনামা প্রণয়ন করে। সংগ্রাম পরিষদে ছিল ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মডিয়া), ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন), এনএসএফ-এর একাংশ এবং ডাকসু।
- ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ১১-দফা দাবিতে ছাত্রগণ আন্দোলনের শুরু ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান। গণজাগরণের ব্যাপকতা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ প্রভৃতি বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি বা ডাক। তবে আন্দোলনের নেতৃত্ব থাকে ছাত্রসমাজের হাতে। ২২ ফেব্রুয়ারি নিঃশর্তভাবে কারাগার থেকে শেখ মুজিবের মুক্তিলাভ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত ।
- ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুবের পতন। ইয়াহিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ এবং পুনরায় মার্শাল ল’ জারি ।

- ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ।
- সামরিক শাসনের মধ্যেই পাকিস্তানে নির্বাচনের ঘোষণা। এলএফও জারি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে। অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত। ১৯৭০ সালের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু নির্বাচনকে ৬-দফার পক্ষে ‘গণভোট’ বলে ঘোষণা করেন।
- ১৯৭০ সালের ৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই কাউন্সিলে ১ হাজার ১৩৮ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । এই কাউন্সিলে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় এবং ৬-দফাভিত্তিক ১১-দফা আদায়ের লক্ষ্যে নির্বাচনকে একটি গণভোট হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
- ১৯৭০ সালের ৬ জুন হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় এবং এই কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় ।
- ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত। বাংলাদেশের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আওয়ামী লীগের জয়লাভ। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্বীকৃতি অর্জন । তিনি পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হন।
- ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া কর্তৃক অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদসভা স্থগিত ঘোষণা। প্রতিবাদে “বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ এই ১-দফা দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ।
- ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, পল্টনের জনসভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায়। ভালোবাসি’ গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির দিক-নির্দেশনা প্রদান । অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা।
- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা ভেঙে যায়। ওই দিন রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞের শুরু।
- ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইপিআরের ওয়্যারলেস মারফত গোপনে ওই ঘোষণা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু পাকবাহিনীকে প্রতিরোধের নির্দেশ দেন ।
- ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এক সভায় মিলিত হন। তারা “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন করেন, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে অনুমোদন দেন এবং বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন। গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। বঙ্গবন্ধু সর্বাধিনায়ক ।
- ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননকে ‘মুজিবনগর’ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত ।
- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়।
- ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ।
- ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেন। শুরু হয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন।
- ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান।
আরও দেখুনঃ