ইসলামশাহের রাজত্বকালে – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “শেখ মুবারক” বিভাগের একটি পাঠ। সাম্যবাদী শেখ আল্লাঈয়ের খু হাত রাঙানোর কারণে মেহ্দীপন্থীদের বিদ্রোহের -আশঙ্কা ছিল। সে-সময় ে মুবারককে সমূলে বিনাশ করার জন্য তাঁর উপর মেহ্দীপন্থী হওয়ার মিথ্যা অভিে আনার চেয়ে শত্রুদের কাছে বড় হাতিয়ার আর কি হতে পারে! আকবরের আম গোড়ার বছরগুলিতে মধ্য-এশিয়ার -শয়বানী তুর্কিদের ভীষণ রমরমা ছিল।
ইসলামশাহের রাজত্বকালে
দেড়শত বছর ধরে শিয়া ধর্মকে নিজের রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে স্বীকার করে নিয়েছিল, এশিয়ার তুর্কিরা তা আদৌ বরদাস্ত করতে পারত না। তখন শিয়া কিংবা রাফজী অভিযোগ তুলে যে কোনো ব্যক্তিকে বিনষ্ট করা সহজ ছিল, সেজন্য শত্রুরা শেখ মুবারককে শিয়া বলতে শুরু করে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি যে শিয়া ছিলেন না, তাতে সন্দেহ নেই। তিনি অন্ধ রক্ষণশীল ছিলেন না, বরং বুদ্ধিবাদী, অত্যন্ত উদার মনোভাবের পণ্ডিত ছিলেন। পিতার চিন্তা-ভাবনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলেই ফৈজী ও আবুল ফজল আকবরের অত প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন ।
শেখ মুবারক শত্রুদের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া থেকে অনেক কষ্টে প্রাণরক্ষা করেন। আবুল ফজল তখনকার দুর্বিপাকের বিষয়ে অনেক কথা লিখেছেন। আকবরের রাজত্বকালের প্রারম্ভকালে শেখ মুবারকের মাদ্রাসা (মহাবিদ্যালয়) খুব চালু ছিল, ভালো ভালো ছাত্র তাঁর কাছে পড়াশোনার জন্য আসত।
শত্রুদের তা পছন্দ হবে কেন? আকবরনামায় আবুল ফজল লিখেছেন— ঈর্ষাকাতর মোল্লারা মিথ্যা অভিযোগ এনে দরবারে শোরগোল তোলার চেষ্টা করছিল। কিছু ভালো মানুষও ছিলেন, তাঁরা আগুনে জল ঢেলে দিতেন। সে-সময় সৎ ব্যক্তিরা দরবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, শয়তান ধোঁকাবাজদের আখড়া হয়ে উঠেছিল দরবার।
মখদুমুল্মুক্ মোল্লা সুলতানপুরী গিরগিটির মতন রং বদলাতে উস্তাদ ছিলেন। তিনি হুমায়ূনের দরবারে থেকেছেন, তারপর শেরশাহ ও ইসলামশাহের দরবারেও ধর্ম-সংক্রান্ত ব্যাপারে সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন। হুমায়ূনের দ্বিতীয়বার রাজ্যলাভের পরেও তিনি নিজের পদে সমাসীন হন এবং আকবরের রাজত্বের প্রারম্ভকালেও তাঁর সেই পদমর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে।
আল্লাঈয়ের রক্তে রক্তাক্ত তাঁর হাত। তিনি শেখ মুবারককেও খতম করার জন্য তৈরি হয়েছিলেন। একদিন শেখ মুবারক তাঁর পুত্র আবুল ফজলকে সঙ্গে নিয়ে জনৈক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলেন। মোল্লা সুলতানপুরীও সেখানে গিয়েছিলেন।
তিনি বিস্তর বাগাড়ম্বর করছিলেন। আবুল ফজল বলেছেন—“আমার তখন যৌবনের তেজ, তর্কের মেজাজ চড়ে গেল। চোখ খোলার পর থেকে শুধু মাদ্রাসাই দেখেছি, বাস্তব জগতের হাটে- বাজারে কখনও পা ফেলিনি। তাঁর অসভ্য বকবকানিতে আমার মুখ দিয়ে কথা বেরিয়ে গেল। সে কথা এমন জায়গায় পৌছল যে মোল্লা লজ্জায় উঠে পালালেন। সেই সময় থেকেই তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার মতলব আঁটতে থাকেন।”
আরও দেখুনঃ