Site icon History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GDCN

হুসেন খাঁ টুকড়িয়ার অবসান | হুসেন খাঁ টুকড়িয়া | আকবর

হুসেন খাঁ টুকড়িয়ার অবসান | হুসেন খাঁ টুকড়িয়া | আকবর

হুসেন খাঁ টুকড়িয়ার অবসান, ক্ষতটা ছিল মারাত্মক । বাদশাহী শল্যবিদ পটি বদলাতে এসেছেন। তিনি ক্ষতস্থান কুরে কুরে শলাকা অনেক ভিতরে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখছিলেন ক্ষতস্থানের গভীরতা। টুকড়িয়া নির্বিকার হাসতে হাসতে আলাপ করছিলেন। এর তিন-চার দিন পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে পাটিয়ালিতে নিয়ে গিয়ে সমাধিস্থ করা হয়।

হুসেন খাঁ টুকড়িয়ার অবসান | হুসেন খাঁ টুকড়িয়া | আকবর

 

 

মোল্লা বদায়ূনী তাঁর গ্রন্থে টুকড়িয়ার জন্য প্রচুর অশ্রুপাত করেছেন, প্রশংসা করে লিখেছেন— “পয়গম্বরের জমানায় হলে তিনি তাঁর সহাবীদের (বন্ধুবর্গের) মধ্যে একজন হতেন।” যখন তিনি লাহৌরের হাকিম ছিলেন, তখন ভিস্তি লোকদের কাছে শোনা গিয়েছিল যে যাবতীয় ভোগের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও তিনি যবের রুটি খেতেন।

তাঁর বক্তব্য ছিল, রসুল তো নানা স্বাদের খাবার খান নি, আমি কেন খাব! তিনি পালঙ্ক ও কোমল শয্যায় শয়ন করতেন না, কেননা হজরত মুহম্মদ সেভাবে কখনও আরাম করেন নি, তাহলে তিনি সেই আরাম উপভোগ করবেন কেন! তিনি হাজার হাজার মসজিদ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও সংস্কার করিয়েছেন ।

তিনি শপথ করেছিলেন যে অর্থ সঞ্চিত রাখবেন না। বলতেন, টাকা আমার কাছে আসে, যতক্ষণ না তা খরচ করে ফেলি, ততক্ষণ বাহুমূলে তীরের ন্যায় বিধতে থাকে। অনেক সময় আদায়ীকৃত অর্থ তাঁর কাছে এসে পৌছতেই পেত না, সেখানেই চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হতো এবং লোকজন টাকা নিয়ে যেত ।

 

 

টুকড়িয়ার চেহারা বিষয়ে তাঁর অনুগ্রহভাজন মোল্লা বদায়ূনী বর্ণনা করেছেন— টুকড়িয়া খুব লম্বা-চওড়া জমকালো চেহারার সৌম্য-দর্শন যুবক ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আমি সব সময় তাঁর সঙ্গে থাকি নি, তবে জঙ্গলের লড়াইয়ে কখনো-কখনো থেকেছি।

মূল কথা হলো, তাঁর মধ্যে যে পরাক্রম দেখেছি, বীরদের প্রাচীন গাথা-কাহিনীতেই তা শোনা যায়। যখন যুদ্ধের জন্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হতেন, তখন আল্লার কাছে প্রার্থনা করতেন, হে প্রভু, হয় আমাকে শহিদ কোরো, নয় তো বিজয়ী। কেউ কেউ প্রশ্ন করত— প্রথমেই জয়লাভের প্রার্থনা কেন করেন না, তাতে তিনি জবাব দিতেন— এখনকার আল্লার বান্দাদের দেখার চেয়ে পুরনো প্রিয়জনদের (শহিদদের) দেখার বাসনা বেশি।

 

 

মৃত্যুকালে তাঁর ঋণ ছিল দেড় লক্ষ টাকার অধিক। তাঁর পুত্র ইউসুফ খাঁ জাহাঙ্গিরের দরবারে আমির ছিলেন এবং তাঁর পৌত্র ইজ্জত খাঁ, শাহজাহানের সময়ে। কুমায়ূন ও গাড়ওয়ালের অজস্র মন্দির ও মূর্তিসমূহ ধ্বংসকারী এই সেই টুকড়িয়া, সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের কারণে যাঁর সমস্ত গুণ দোষে পরিণত হয়েছিল।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version