রহীম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি, কিন্তু আকবর রহীমকে শিল্পী নয়, সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সৈন্য হিসেবেই রহীমের জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয়। নয় বছর বয়সেই আকবর তাঁকে ‘মনায়ম খান’ উপাধি প্রদান করেন। আকবর যখন গুজরাত বিজয়ের অভিযানে যান, তখন ষোলো বছর বয়সের (১৫৭৩ খ্রিঃ) রহীমকে সেনা-আধিকারিক হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যান।
রহীম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি | রহীম | আকবর
এই সময় আকবর দু’মাসের যাত্রাপথ সাত দিনে অতিক্রম করেন। ষোলো বছরের বালকের পক্ষে এই সফরই প্রমাণ করে, তিনি কত প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছিলেন। উনিশ বছর বয়সে (১৫৭৬ খ্রিঃ) আকবর তাঁকে গুজরাতের রাজ্যপাল নিয়োগ করেন। দূরে থাকার ইচ্ছে ছিল না মির্জা খানের, কিন্তু আকবর তাঁকে বাধ্য করেন।
রহীম সেই অল্প বয়সেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন। পরের বছর চিতৌড়ের মহারানার সঙ্গে আকবরের যুদ্ধ হয়, সেই যুদ্ধে রহীম অংশগ্রহণ করে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। চব্বিশ বছর বয়সে (১৫৮১ খ্রিঃ) রহীম রণথম্ভৌর জায়গির পান। ছাব্বিশ বছর বয়সে (১৫৮২ খ্রিঃ) তিনি জাহাঙ্গিরের আতালীক নিযুক্ত হন । আতালীক তুর্কি শব্দ, অর্থ গুরু ও শিক্ষক। তখন কি তিনি জানতেন, আজ তিনি যাঁর আতালীক, তাঁর হাতেই অন্তিম কালে মৃত্যু-যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে ।
গুজরাতে অনুপস্থিত থাকার জন্য সেখানে বিদ্রোহ পুনরায় গুরুতর রূপ ধারণ করে। জৌনপুরের মতোই গুজরাতে একটা শাহী বংশ কয়েক পুরুষ ধরে রাজত্ব করে আসছিল। দিল্লীর বাইরে অবস্থিত মুসলমান সুলতানদের মতোই গুজরাতী সুলতানও হিন্দু প্রজাদের নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করতে অনেকখানি সফল হয়েছিলেন, তাই মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে তাঁরা তাদের সহযোগিতা পেতেন। অন্যদের এই বিদ্রোহ-দমনে সফল হতে না দেখে আকবর সাতাশ বছর বয়স্ক রহীমকে সেনাপতি করে গুজরাত প্রেরণ করেন এবং রহীম জয়লাভ করেন। আকবর রহীমকে ‘খানখানা’ উপাধি প্রদান করেন।
মধ্য-এশিয়ায় রাজাকে খান বলা হয়ে থাকে। এই মঙ্গোল শব্দটি সেই অর্থে বরাবর প্রচলিত হয়ে আসছিল। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বুখারা সাম্রাজ্যে বাদশাহ ব্যতীত অন্য কেউ নিজের নামের সঙ্গে খান শব্দ যোগ করতে পারত না। ভারতে তার অবশ্যই কমে আসছিল, তবে আজকালকার অবস্থায় পৌছায়নি। ‘খানখানা’র অর্থ রাজাধিরাজ। সাতাশ বছর বয়সে রহীম তাঁর পিতার এই উপাধিও লাভ করেছিলেন।
মূল্য আবুল ফজল, ফেজী অন্তরে শিয়া ও বাইরে সুন্নী ছিলেন। বৈরাম খাঁর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এদিক দিয়েও রহীম আবুল ফজলের অত্যন্ত কাছাকাছি ছিলেন। আবুল ফজল আকবরের কেবল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বলতে গেলে রাজকার্যে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে স্বীকৃত হতো। রহীমের প্রতি আবুল ফজল অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ ছিলেন ।
আরও দেখুনঃ