সমুদ্র বিজয়

সমুদ্র বিজয় – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “মহান দ্রষ্টা” বিভাগের একটি পাঠ। আকবর ভাবতে শুরু করেছিলেন যে পৃথিবীতে সেই রাষ্ট্রই শক্তিশালী হবে, সমুদ্রের উপর যে বিজয়প্রাপ্ত হবে। পোর্তুগিজদের নৌবল সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের কামানবাহী জাহাজগুলোর ভয়েই তিনি সুরাতে হজের শর্তে গোয়ার সঙ্গে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হন।

 সমুদ্র বিজয়

 সমুদ্র বিজয় | মহান দ্রষ্টা | আকবর

 

তাঁর আপনজনদের নিরাপদে হজ করানোর জন্য তাঁকে দমনের নিকটে একটি গ্রাম পোর্তুগিজদের ভেট দিতে হয়। তাঁর সাম্রাজ্য সিন্ধু, গুজরাত এবং বাংলা-ওড়িশায় সমুদ্রোপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানতেন যে স্থলের পরেই তাঁর প্রতাপ শেষ । জলের সঙ্গে সঙ্গে ফিরিঙ্গিদের রাজ্য শুরু হয়ে যায় । কি এমন ছিল ফিরিঙ্গিদের? তাদের ছিল বিশাল বিশাল জাহাজ, সেগুলোর উপর তখনকার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী কামান বসানো থাকত। আকবরের সেনাধ্যক্ষদের এইসব কামান ও জাহাজের জন্যই পোর্তুগিজদের সম্মুখে কয়েকবার সংযত হতে হয়েছিল ।

তিনি জানতেন, এ ব্যাপারে তিনি তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। নিজের বন্দরগুলিতে কখনো কখনো তাঁকে পোর্তুগিজ কর্মচারী নিযুক্ত করতে হয়েছিল, হুগলির ঘটনায় আমরা তা জানি । তিনি ভালোভাবেই বুঝতেন যে তাঁর সঙ্গে পোর্তুগিজরা যতই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করুক না কেন, যুদ্ধ-সংক্রান্ত সমস্ত রহস্য তারা তাঁর কাছে প্রকাশ করবে না।

সেজন্য তিনি ইউরোপের অন্যান্য শক্তির সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইতেন। দরবারে আগত ইংরেজ দূত মিল্‌ডেনহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরে তিনি অবগত হন যে ইউরোপীয়দের নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড শত্রুতা রয়েছে, এবং সেজন্য একজন না বললেও অন্য কেউ তা প্রকাশ করতে পারে ।

 

 সমুদ্র বিজয় | মহান দ্রষ্টা | আকবর

 

সমুদ্র বিজয় ছিল একটি সমগ্র জীবনের কাজ, অথচ আকবরের সারা জীবন সমগ্র দেশকে প্রথমে একচ্ছত্র করার সাধনায় এবং শেষে অপদার্থ পুত্রদের কলহের বিড়ম্বনায় ব্যয় হয়ে যায়। তা-সত্ত্বেও তিনি তাঁর সেই সঙ্কল্প ত্যাগ করেননি। নিজের যুদ্ধাভিযানে তিনি যমুনা, গঙ্গা ও অন্যান্য নদীতে বড় বড় বজরা ব্যবহার করেছিলেন। কাশ্মীরে ত্রিশ হাজার নৌকোর বহর তাঁর সঙ্গে গিয়েছিল ।

কিন্তু তা কামান চালানো কিংবা তাদের সঙ্গে মুখোমুখি সঙ্ঘর্ষে যাওয়ার মতো নৌবহর ছিল না। সমুদ্রের তীরে থাকারও অবকাশ পাননি তিনি । লাহৌরে তিনি তেরো বছর থাকতে বাধ্য হন। সেখানেই একটি সামুদ্রিক জাহাজ ১০০২ হিজরীতে (১৫৯৩-৯৪ খ্রিঃ) তৈরি করান। সে-জাহাজের মাস্তুল ছিল ১০৫ ফুট উঁটু, ২৯৩৬টি বড় কড়িকাঠ এবং ৪৩৮ মণ ২ সের (আকবরী) লোহা লেগেছিল তৈরি করতে। ২৪০ জন ছুতোর ও কামার পরিশ্রম করে যে দিন জাহাজ নির্মাণের কাজ শেষ করে, সেদিন আকবর নিজে গিয়েছিলেন রাবীর তীরে । হাজার লোকে ঠেলে জাহাজটাকে

জলে ভাসায়, কিন্তু রাবী বড় নদী নয়, অগভীর জলের জন্য কয়েক জায়গায় জাহাজ আটকে যায়। তা-সত্ত্বেও সেটাকে লাহৌর বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১০০৪ হিজরীতে (১৫৯৫-৯৬ খ্রিঃ) আরও একটি জাহাজ তৈরি করানো হয়। প্রথম জাহাজের অভিজ্ঞতা থেকেই উপলব্ধি হয় যে জাহাজ একটু ছোট আয়তনে তৈরি করা উচিত, নইলে নদীতে নিয়ে যেতে অসুবিধে হবে। ছোট হওয়া সত্ত্বেও তা দুই শত টনের বেশি ভার বহন করতে সক্ষম ছিল ।

 

 সমুদ্র বিজয় | মহান দ্রষ্টা | আকবর

 

তার মাস্তুল ছিল ১১১ ফুট উঁচু। সেটি তৈরি করতে ছিয়ানব্বই হাজার তিন শত আটত্রিশ টাকা খরচ পড়েছিল । আকবর শুধু শখের জন্যই এইসব জাহাজ তৈরি করাচ্ছিলেন না। যদি সমুদ্রের তীরে থাকার অবকাশ হতো তাঁর, তাহলে তিনি কামানওয়ালা বড় জাহাজ তৈরি করাতে পারতেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment