সুলেমান খাঁর বিরুদ্ধে সংগ্রাম | বাংলা-বিহার বিজয় | আকবর

সুলেমান খাঁর বিরুদ্ধে সংগ্রাম, বাংলা-বিহার ছিল শেরশাহের দুর্গ। সেই বলে বলীয়ান হয়েই তিনি দিল্লীতে পতাকা ওড়াতে সফল হয়েছিলেন। সেই দুর্গ জয় করতে আকবরের সময় লেগেছিল একুশ বছর। কয়েক শত বছর ধরে বাংলা ও বিহার পাঠানদের শক্ত ঘাঁটি হয়েই থেকেছে। প্রকৃতপক্ষে শেরশাহ ও তাঁর পুত্র ইসলামশাহ— এই দু’জনই শূরী বংশের প্রতাপশালী বাদশাহ ছিলেন। ইসলামশাহের পুত্র তথা নিজের ভাগিনেয়ের রক্তে হাত রাঙিয়ে আদলী ক্ষমতা দখল করেন ঠিকই, তবে তাঁর বিলাসিতা ও অত্যাচারে পাঠানেরা অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে।

সুলেমান খাঁর বিরুদ্ধে সংগ্রাম | বাংলা-বিহার বিজয় | আকবর

 

সুলেমান খাঁর বিরুদ্ধে সংগ্রাম | বাংলা-বিহার বিজয় | আকবর

 

উত্তর ভারতের প্রধান ভূ-ভাগে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে আকবরকে অনেক বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়। গুজরাতও দুই-দুইবার মাথা তুলে তখন চুপচাপ। কিন্তু বিহার, বাংলা, কাবুল ও দাক্ষিণাত্য তার অনেকখানি সময় নেয়। দাক্ষিণাত্যকে তিনি সম্পূর্ণরূপে হস্তগত করতেই পারেননি। তার পুত্র ও পৌত্রকেও এই ঝামেলা পোয়াতে হয়, ঔরঙ্গজেবের শাসনের অর্ধেক সময় তো দাক্ষিণাত্যের সংগ্রামেই ব্যয় হয় এবং সেখানেই দৌলতাবাদের নিকেট খুদাবাদে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রয়াত হন ।

বাংলায় জোর ছিল কার্রানী পাঠানদের । তাদের দমন করার জন্য আদলী গওয়ালিয়র থেকে বাংলায় যান, কিন্তু তিনি সফল হননি। বাংলার হাকিম তাজ খাঁ শূরীদের অধীনতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। ইসলামশাহের মৃত্যুর পরে আদলী শাসনক্ষমতায় বসতেই তিনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেন। এদেরই সর্দার ছিলেন তাজ খাঁ।

তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা সুলেমান কার্রানী। তাঁর সুলতানির মধ্যে ছিল বারাণসী থেকে কামরূপ (অসম) ও ওড়িশা পর্যন্ত ভূ-খণ্ড। তিনি তাঁর নামের সঙ্গে ‘বাদশাহ’ শব্দ যোগ করতেন না, সর্বদা ব্যবহার করতেন ‘হজরত- আলা’ (মহাপ্রভু) । সুলেমান বাংলার পুরাতন সুলতানদের রাজধানী গৌড় দখল করেন ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে ।

 

সুলেমান খাঁর বিরুদ্ধে সংগ্রাম | বাংলা-বিহার বিজয় | আকবর

 

প্রথমে সেখানেই রাজধানী ছিল, কিন্তু জায়গাটায় দূষিত কম্পজ্বরের অত্যন্ত প্রকোপ দেখা দেয়, সেজন্য তার দক্ষিণ-পশ্চিমে গঙ্গাতীরে অবস্থিত টাঁড়ায় তাঁর রাজধানী নির্মাণ করেন । আজকাল টাডা গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেজন্য সেকালের কোনো নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায় না । সুলেমান রোহতাস দুর্গ অধিকার করতে চেয়েছিলেন। সেখানে তখনও বাদশাহী ফৌজ থেকে গিয়েছিল।

১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দে আকবর খানেজমানকে প্রেরণ করেন, জৌনপুর ইত্যাদি অধিকার করে তিনি জমানিয়ায় (জেলা গাজীপুর) নিজের নামে শহর পত্তন করেন, বাদশাহী ফৌজের সঙ্গে যুদ্ধ করা সুলেমানের মনঃপূত ছিল না। স্বীকার করে তিনি মসজিদে মসজিদে আকবরের নামে খুৎবা পাঠ করান।

খানেজমান বিদ্রোহ করলে সুলেমান আকবরের সঙ্গে যোগ দেন। ইসলামানুরাগী হিসেবে তিনি খুব প্রসিদ্ধ ছিলেন। সব সময় তাঁর সঙ্গে দেড় শত আলিম ও সন্ত থাকত। প্রত্যুষেই শয্যাত্যাগ করে নামাজ পড়তেন, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত ধর্মচর্চায় কাটাতেন।

৯৮০ হিজরীতে (১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে) সুলেমানের মৃত্যু হয়। তার জ্যেষ্ঠপুত্র বায়জিদ গদিতে বসেন। কয়েক মাস পরে আফগান সর্দারেরা তাকে হত্যা করে তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা দাউদকে সিংহাসনে বসান। সে-সময় লোদী খানের হুকুম চলত তাঁর রায়েই দাউদকে ক্ষমতায় বসানো হয়। অথচ গৃজর খা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন।

 

সুলেমান খাঁর বিরুদ্ধে সংগ্রাম | বাংলা-বিহার বিজয় | আকবর

 

তিনি বিহারে বায়জিদের পুত্রকে গদিতে বসিয়ে দেন। লোদী বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কলহ বাড়তে দেননি। দাউদ আকবরের অধীনস্থ হয়ে থাকতে রাজি ছিলেন না। তিনি বাদশাহ বলে নিজেকে ঘোষণা করলেন, নিজের নামে খুৎবা পাঠ করালেন, এবং দাউদী মুদ্রা চালু করলেন। আফগানদের সঙ্গে তাঁর পিতা ও পিতৃব্যের সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ছিল। দাউদ তাদের সঙ্গে চাকর-বাকরের মতো ব্যবহার করতে লাগলেন ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment