হুমায়ূন পুনর্বার ভারত-সম্রাট, হুমায়ূন রুষ্ট রাজলক্ষ্মীর সন্তোষ-বিধানের জন্য ইরান থেকে কন্দাহারের দিকে রওনা দিলেন। সিস্তানে পৌছে তিনি এই দেখে খুশি হলেন যে শাহ তাঁকে বারো হাজারের পরিবর্তে চোদ্দ হাজার সৈন্য দিয়েছেন। তিনি সেনা নিয়ে কন্দাহারে এলেন। আসকরী মির্জা শহর-বন্দী হয়ে রইলেন। কয়েকদিন অবরুদ্ধ থাকার পর ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন।
হুমায়ূন পুনর্বার ভারত-সম্রাট | প্রারম্ভিক জীবন | আকবর
হরানা (সন্যরা দুর্গ অধিকার করে, সেখানে যে ধন-সম্পদ ছিল, সমস্ত শাহ তহমাস্পকে পাঠিয়ে দিল। হুমায়ূনের ভালো লাগেনি । কিছুকাল পরেই তিনি হঠাৎ আক্রমণ করে ইরানীদের হাত থেকে কন্দাহার ছিনিয়ে নিলেন। তারপর তিনি দৃষ্টি ফেরালেন কাবুলের দিকে। কামরানের বহু সঙ্গী-সাথী তাকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল।
যুদ্ধে পরাজিত হলেন। তিনি কাবুল ত্যাগ করে ভারতের দিকে যাত্রা করেন। ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর হুমায়ূন বিনা-প্রতিরোধে কাবুল শহরে প্রবেশ করেন। আকবর ও তাঁর জ্যেষ্ঠ সৎ-ভগ্নী বখ্শী বানুকে গত শীতকালে কন্দাহার থেকে কাবুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খানজাদা বেগম আকবরকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তিন বছরের পুত্রকে কাছে পেয়ে হুমায়ূন খুব আনন্দবোধ করেন। হামিদা বানুকে কন্দাহারে রেখে এসেছিলেন। কাবুলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাঁকেও কন্দাহার থেকে নিয়ে আসেন।
বিশ্বাস করা কঠিন, তবে কথিত আছে, আকবর তাঁর মাতাকে দর্শন মাত্রেই চিনে ফেলেন। ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের কোনো একদিন ধুমধাম সহকারে আকবরের খৎনা হয়। এই সময় তাঁর বদরুদ্দীন নাম বদল করে জালালুদ্দীন রাখা হয়। গভীর সঙ্কট অতিক্রম করতে হয়েছিল তাঁকে, তাতে তাঁর জালাল (প্রতাপ)-এর পরিচয় পাওয়া যায়, সেজন্য জালালুদ্দীন (প্রতাপধর্ম) নাম অপেক্ষাকৃত বেশি উপযুক্ত মনে করা হতো।
আকবরের জন্ম প্রকৃতপক্ষে ২৩শে নভেম্বর, কিন্তু জ্যোতিষের সুফলের কথা মাথায় রেখে ঐতিহাসিকেরা ওই দিনটিকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে ৫ই রজব (১৫ই অক্টোবর) রবিবার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নাম পরিবর্তনের এটাও একটা কারণ, কেননা যে-দিনটিকে নতুন জন্মদিন বলে গ্রহণ করা হয়, সেদিনটি পূর্ণিমা ছিল না। ইতিহাস আকবরকে জালালুদ্দীন নামেই জানে। প্রভুভক্ত জওহরের স্মৃতিকথা থেকেই জানা যায় যে পূর্ণিমার দিনে জন্মগ্রহণ করার জন্যই শিশুর নাম প্রথমে বদরুদ্দীন রাখা হয়েছিল ।
পুত্রের খৎনার পর হুমায়ূন মনস্থ করলেন, আরও অগ্রসর হওয়ার আগে কাবুলের উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতের অপর দিকে অবস্থিত বদশী অধিকার করবেন। তিনি কাবুল থেকে রওনা দেন। কিম-এ পৌঁছানোর পর তিনি এমন কঠিন অসুখে আক্রান্ত হলেন যে চারদিক বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইলেন।
অনুজ ভ্রাতা হিন্দাল ভাবলেন, ভ্রাতার স্থान তিনি নিজে গ্রহণ করবেন। সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আসকরী কাবুলের দুর্গে নজরবন্দী ছিলেন। কিন্তু আকবর ছিলেন সেখানকার অন্তঃপুরে বেগমের সঙ্গে। কামরান সিন্ধু অঞ্চলে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সুযোগ পেয়ে তিনি কাবুলে এসে পুনরায় নিজের অধিকার কায়েম করলেন।
হুমায়ূনকে তখন বদশার আগে কাবুলের দিকেই নজর দিতে হল। তিনি এসে দুর্গ অবরোধ করলেন। হুমায়ূনের সেনা যখন দুর্গের উপর গোলাগুলি বর্ষণ করছিল, তখন কামরান শিশু আকবরকে তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার জন্য প্রাচীরের উপর বসিয়ে দেন। গোলাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কথিত আছে, সে সময় মাহম আনগা (আনকা) নিজে আকবরকে কোলে নিয়ে গুলির দিকে পিঠ পেতে বসে থাকেন। কামরান দ্বিতীয়বার কাবুল অধিকার করে, বিরোধীপক্ষের অবোধ শিশুদের হত্যা করে নিজের পাশবিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আকবরের সঙ্গেও তিনি সেরকম আচরণ করতে পারতেন, কিন্তু আকবরকে তো এক বৃহৎ ইতিহাস রচনা করতে হবে। অবশেষে কামরান দেখলেন, কোনোমতেই কাবুল রক্ষা করা সম্ভব নয়। ১৫৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল তিনি গোপনে সেখান থেকে বেরিয়ে বদশার দিকে চাল যান ৷
১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে হুমায়ূন তাঁর ভ্রাতা হিন্দালের সঙ্গে বদশা আক্রমণ করেন। আকবর তাঁর মাতার সঙ্গে কাবুলে থেকে গিয়েছিলেন। আগস্টে কামরান ভ্রাতার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরস্পর চোখে জল নিয়ে আলিঙ্গন করলেন। মির্জা আসকরীর শত্রুতাও সে-সময় উপেক্ষা করা হল। শীতকালের শুরুতে কাবুলে ফিরে হুমায়ূন বলখ অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করেন। ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে কিপচক নামক স্থানে হুমায়ূনের বহু ক্ষতি হয় এবং তিন নিজেও মারাত্মক আহত হন ।
তিন মাস পর্যন্ত মানুষ জানত যে উজবেকদের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কামরান পুনরায় (১৫৫০ খ্রিঃ) কাবুল ও আকবরের মালিক হয়ে যান। ওই বছরই হুমায়ূন পুনরায় কামরানকে পরাভূত করেন। মির্জা আসকরীকে বন্দী করার সঙ্গেই কাবুল ও আকবর তাঁর হাতে আসে। আসকরীকে ক্ষমা করে তাঁকে মক্কায় নির্বাসিত করা হয়। কিন্তু যাত্রাপথেই তাঁর মৃত্যু হয়। ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে কোনো এক যুদ্ধে বত্রিশ বছর বয়সে হিন্দাল নিহত হন। হিন্দালের আসল নাম ছিল মুহম্মদ নাসির অথবা আবু নাসির মুহম্মদ।
হিন্দে (ভারতে) হয়েছিলেন বলে তাঁর নাম হয়েছিল হিন্দাল । তিনি হুমায়ূনের সবচেয়ে বেশি পক্ষপাতী ছিলেন। হুমায়ূন তাঁকে গজনীর জায়গির দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা রুকৈয়া বেগমের সঙ্গে বাল্যকালেই আকবরের বিবাহ দিয়ে ওই জায়গির আকবরকে প্রদান করেন এবং ওই বছরেরই (১৫৫১ খ্রিঃ) শেষ দিকে তাঁকে গজনীর পুতুল শাসক করে প্রেরণ করেন।
জাহাঙ্গিরের আমলে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে রুকৈয়া চুয়াশি বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে হুমায়ূনের চোট লেখেছিল, তখন নয় বছর বয়স্ক জায়গিরদারকে গজনী থেকে আনিয়ে নিজের কাছে রাখাই সমীচীন বোধ করেন তিনি ।
হুমায়ূনের কাছে কামরান এক বড় সমস্যা ছিল। তিনি ভারতের দিকে অগ্রসর হতে চাইতেন, কিন্তু কামরানের দিক থেকে যে কোনো সময় বিপদের আশঙ্কা ছিল। ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে নমক পাহাড়ের (পিণ্ডদাদন খাঁর) ধক্খর-সর্দার সুলতান আদম খাঁ কামরানকে ধরে ফেলেন।
সে সময় কামরান নারী বেশে আত্মগোপনে করে ছিলেন। আদম খা তাকে নিয়ে গিয়ে হুমায়ূনের কাছে উপস্থাপিত করেন। যদিও কামরান তাঁর কৃতকর্মের জন্য মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য, কিন্তু হুমায়ূন ভ্রাতার প্রাণ নিতে চাননি। মৃত্যুদণ্ডের বদলে তাঁকে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
পরে তাঁকে মক্কায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার হয়, সেখানে তিন বছরের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। কামরানের এক পুত্রের দিক থেকে বিপদের ভয় ছিল, সেজন্য তাঁকে বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়। আকবরের আমলে গওয়ালিয়রের দুর্গকে শাহজাদাদের বন্দীশালা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ভয় ছিল, তিনি আবার না পিতার পথ গ্রহণ করেন, সেজন্য ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে সঙ্কটকালে তাঁকে হত্যা করানো হয় ।
১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে শেরশাহের পুত্র সলীম (ইসলাম) শাহের মৃত্যু হয় গওয়ালিয়রে। তাঁর বারো বছর বয়স্ক পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ তিন দিনও হয়নি, তাঁর মাতুল তথা শেরশাহের ভ্রাতুষ্পুত্র মুহম্মদ আদিল (আদলী) তাঁকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন।
সে-সময় কয়েকজন শূরী শাহজাদা নিজের নিজের এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এই উত্তম সুযোগ দেখে হুমায়ূন ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কাবুল থেকে ভারতের দিকে রওনা হন। জালালাবাদে কাবুল নদী অতিক্রম করার পর তিনি নিজের দ্বাদশ বর্ষীয় উত্তরাধিকারীর মঙ্গলার্থে এক বিশেষ বিধি পালন করেন, জওহর তার উল্লেখ করেছেন—
“যখন আমরা সেখানে পৌছলাম, তখন দেখলাম, মহামান্য চাঁদের দিকে মুখ করে বসে আছেন। তিনি শাহজাদাকে সামনে বসতে বললেন। তারপর কুরানের কয়েকটি আয়ত্ পাঠ করলেন । প্রত্যেক আয়ত্ শেষ হলে তিনি শাহজাদার উপর ফুঁ দিচ্ছিলেন। শাহজাদা খুব আনন্দ পাচ্ছিলেন।”
এই সময় মুনায়ম খাঁকে আকবরের আতালীক (সংরক্ষক গুরু) নিযুক্ত করা হয় এবং সেনা-পরিচালনার ভার বৈরাম খাঁর হাতে দেওয়া হয়। নিজেদের পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধরত শূরীদের দমন করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে হুমায়ূন লাহৌর অধিকার করে ফেলেন।
২২শে জুন সরহিন্দে শেরশাহের ভ্রাতুষ্পুত্র সিকান্দার শূরের সঙ্গে যুদ্ধে বিরাট জয়লাভ করেন। বিজয়ের শিরোপা আকবরের মাথায় পরানো হয়, কারণ বৈরাম খাঁ ও শাহ আবুল ম-আলী একজন আরেকজনকে বিজেতা হতে দিতে রাজি ছিলেন না। এই সময় আকবরকে যুবরাজ ঘোষণা করা হয়।
একই সময়ে আকবরের মাতুল, হামিদা বানুর ভ্রাতা, খাজা মুয়াজ্জমকে শত্রুর সঙ্গে যোগ-সাজশের অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জুলাই মাসে হুমায়ূন দিল্লী হস্তগত করতে সক্ষম হন। নভেম্বর ত্রয়োদশ বর্ষার আকবরকে পাঞ্জাবের রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হল এবং মুনায়ম খাঁর পরিবর্তে আতালীকের পদে বহাল করা হল বৈরাম খাঁকে।
কিন্তু হুমায়ূন দিল্লীর তখতে খুব বেশি দিন থাকতে পারেননি, উত্তর ভারতের প্রধান নগরসমূহ অধিকার করার তাঁর যে পরিকল্পনা, তা বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যাকাল (পুরনো দুর্গে)। শেরশাহ নির্মিত শেরমণ্ডলকে পুস্তকাগারে পরিণত করা হয়েছিল। হুমায়ূনের বই পড়ার খুব শখ ছিল।
তাঁর পুত্র যদিও নিরক্ষর থেকে গিয়েছিলেন, তিনিও পুস্তক-প্রেমী ছিলেন, তবে পুস্তক-পাঠ শ্রবণ করে নিজের শখ মেটাতেন। পাঠাগারের ছাদের অন্যান্যদের সঙ্গে হুমায়ূনের কথাবার্তার সময় আজানের শব্দ ভেসে আসে। হুমায়ূন উপরের সিঁড়িতে বসতে গিয়েছিলেন, পা পিছলে নিচে মেঝেতে পড়ে যান। মাথা ফেটে গিয়েছিল । অজ্ঞান হয়ে যান, তিন দিন পরে অজ্ঞানাবস্থাতেই প্রাণবায়ু ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শত্রুরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে, সেজন্য আসর ঘটনা গোপন রাখা হয়।
আকবর সে-সময় পাঞ্জাবে ছিলেন। এক তুর্কি নৌসেনাপতি সিদী আলী রঈস তখন দিল্লীতে ছিলেন। হুমায়ূনের সুস্থ হয়ে ওঠার মিথ্যা খবর দিয়ে তাঁকে লাহৌরে পাঠানো হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি কলানোরে (জেলা গুরুদাসপুর) আকবরকে রাজাসনে আসীন করার পরই।
গুরুদাসপুর থেকে পনেরো মাইল পশ্চিমে অবস্থিত এই ছোট শহরটি বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। ইংরেজরা আঠারো ফুট লম্বা-চওড়া ও তিন ফুট উঁচু ইট-দ্বারা নির্মিত ‘ততে আকবরী’-কে স্মারক হিসেবে সুরক্ষিত রেখেছিল। তবে পাকিস্তানে আকবর নয়, ঔরঙ্গজেবই আদর্শ, সেজন্য তারা সেই পবিত্র স্থান সুরক্ষার কথা ভাবরে, সে সম্ভাবনা খুবই কম। কলানোর, সম্ভবত কল্যাণপুর কিংবা কলানগরের অপভ্রংশ, হিন্দু-কালেও মহত্ত্বপূর্ণ স্থান ছিল । লাহৌরের হিন্দু রাজাদেরও অভিষেক হতো সেখানে ।
মসনদে আরোহণে দিন শাহ আবুল ম-আলী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তিনি কারের কোনো এক উচ্চবংশ-জাত ছিলেন। হুমায়ূন ইরান থেকে যখন কন্দাহারে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন তিনি হুমায়ূনের নিকট কাজে যোগদান করেন। হুমায়ূন অত্যন্ত স্নেহ প্রকাশ করে তাঁকে ‘ফরজন্দ’ (পুত্র) পদবি দান করেন।
সরহিন্দের বিজয়- গৌরবের দাবি নিয়ে বৈরাম খাঁ ও ম-আলীর মধ্যে যে বিবাদ হয়, তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ম-আলী তো প্রথমে অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেই অস্বীকার করেন, পরে দরবারে বসার জায়গা ইত্যাদি নিয়ে কিছু শর্ত রাখেন। বৈরাম খাঁ সমস্ত স্বীকার করে নেন। অভিষেক অনুষ্ঠান সমাপ্ত হল। ভোজসভায় দস্তরখানা পাতা হয়।

সে-সময় বৈরাম খাঁর ইশারায় ম-আলীকে হত্যা প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু তা আকবরের পছন্দ ছিল না। তাঁকে কয়েদ করা হয়, কিন্তু তিনি কয়েদখানা থেকে পালিয়ে যান। আকবরের পিতৃব্যরা যদি কেউ সে-সময় সেখানে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে অবশ্যই কিছু গণ্ডগোল বাধাতেন ।
দিল্লীর সর্বাপেক্ষা প্রাচীন অট্টলিকাগুলির মধ্যে হুমায়ূনের স্মৃতিসৌধটি সবচেয়ে সুন্দর। হুমায়ূনের দ্বিতীয় পত্নী হাজী বেগম নিজের খরচে সেটা নির্মাণ করাতে শুরু করেন। মীর মির্জা গিয়াস তার বাস্তুশিল্পী ছিলেন। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে আকবর যখন আজমের থেকে দিল্লী যান, তখন সদ্য তার নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়েছিল। অর্থাৎ সেটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল তেরো-চোদ্দ বছর। আকবরের সৎ-ভ্রাতা মির্জা হাকিমকে মুনায়ম খার অভিভাবকত্বে কাবুলের উপরাজ নিযুক্ত করা হয় ।
আরও দেখুনঃ