রানী দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে জয়লাভ | রাজ্যবিস্তার | আকবর

রানী দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে জয়লাভ, বানী দুর্গাবতী মহোবার চন্দেল রাজার কন্যা ছিলেন, তাঁর বিবাহ হয় গঢ়াকটঙ্গার রাজার সঙ্গে। গঢ়াকটঙ্গার রাজা ছিলেন মূলতঃ গোণ্ড, তবে প্রতিপত্তিশালী বংশগুলির উচ্চবর্ণদের মধ্যে হামেশা পরিবর্তন লক্ষ্যগোচর হয়। বর্তমান শতাব্দীতেই কত অ- রাজপুত রাজবংশী জীবিকা, বিবাহ ইত্যাদি সূত্রে রাজপুত সমাজভুক্ত হয়ে গেছে।

রানী দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে জয়লাভ | রাজ্যবিস্তার | আকবর

 

রানী দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে জয়লাভ | রাজ্যবিস্তার | আকবর

 

রানী দুর্গাবতীর রাজ্য অধুনা মধ্যপ্রদেশের প্রায় সারা উত্তর ভাগ জুড়ে ছিল। যৌবনেই রানীর স্বামীর মৃত্যু হয়। দুর্গাবতী তাঁর পুত্র বীরনারায়ণের অভিভাবিকা হয়ে বিগত পনেরো বছর ধরে শাসনভার বহন করে আসছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতা ও বীরত্বের প্রশংসা করে আবুল ফজল লিখেছেন— “বাজবাহাদুর ও মিয়ানাদের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধে তিনি সর্বদা জয়লাভ করতেন। যুদ্ধের সময় তাঁর সেনাবাহিনীতে কুড়ি হাজার উন্নতমানের সওয়ার ও এক হাজার বিখ্যাত হাতি থাকত।…

বাণ ও বন্দুক চালনায় রানী দুর্গাবতী ছিলেন খুব সিদ্ধহস্ত। প্রায়ই শিকারে যেতেন এবং স্বয়ং বন্দুক দিয়ে শিকার করতেন। রানী দুর্গাবতীর রাজ্যের উপর আকবরের নজর না দেওয়াই উচিত ছিল, তাতে সন্দেহ নেই । তাঁর শাসনে রাজ্য সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ ছিল, তার উপর তিনি ছিলেন নারী। কিন্তু আকবরের স্বপ্ন ছিল অন্যরকম। আসফ খাঁ (প্রথম) পান্নার (বুন্দেলখণ্ড) রাজাকে অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য করে পান্নায় বাদশাহের শাসন বলবৎ করেন। মালওয়া আগেই হস্তগত হয়েছিল।

এরপর আকবর আসফ খাঁকে গঢ়াকটঙ্গার দিকে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেন। রানী দুর্গাবতী সম্পর্কে জনশ্রুতি, “রানীর মধ্যে দুর্গাবতী, আর সব গাইয়ে’—ভুল ছিল না। লক্ষ্মীবাঈদের পূর্বে তাঁরই বুন্দেলখণ্ড-ভূমিতে এই বীরাঙ্গনার জন্ম। তিনি শুনেছিলেন, আকবরের বিজয়ী সেনার সম্মুখে কেউ দাঁড়াতে পারে না, তবুও সাহস ত্যাগ করেননি। কিন্তু তাঁর সঙ্গী-সাথীদের অত সাহস ছিল না, তারা তাঁকে ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।

 

রানী দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে জয়লাভ | রাজ্যবিস্তার | আকবর

 

শেষ যুদ্ধ লড়েছিলেন তিনি গঢ়া ও (জেলা জব্বলপুর) মধ্যে। স্বয়ং এক বিশাল হাতির পিঠে চড়ে আকবরের সেনার মাঁডলের মোকাবিলা করছিলেন তিনি। দু’টি তীর এসে তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। যখন তিনি দেখলেন, আত্মরক্ষার কোনো উপায় নেই, তখন অপমান থেকে বাচবার জন্য তিনি নিজের হাতে বুকে ছুরি বিদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেন।

এইভাবে শত শত বছরে একজনের জন্ম হওয়া অসাধারণ বীর মহিলার জীবনাবসান হয়। দুই মাস পরে আসফ খাঁ চৌরাগড় দুর্গ (জেলা নরসিংহপুর) অধিকার করতে সক্ষম হন। ঢালাই ও বিনা- ঢালাইয়ের রাশি রাশি স্বর্ণমুদ্রা, জড়োয়া বাসন, মুক্তো, মণি, মূর্তি, চিত্র ইত্যাদির সঙ্গে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য তাঁর হস্তগত হয়। কথিত আছে, আলাউদ্দীন খিলজীর সুবর্ণ আশরফিতে পূর্ণ এক শত বড় বড় কলস ছিল।

তরুণ রাজা বীরনারায়ণও মাতার মতোই বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে প্রাণাহুতি দেন। আবুল ফজলের বক্তব্য অনুসারে, তিনি আগে থেকেই তাঁর দুই মন্ত্রী ভোজ কায়থ ও মিয়া ভিখারী রুমীকে নির্দেশ দিয়ে রাখেন, সময় হলেই যেন জহর ব্রতের অনুষ্ঠান করে দেন।

 

রানী দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে জয়লাভ | রাজ্যবিস্তার | আকবর

 

জহর থেকে কোনোরকমে রানীর ভগ্নী কলাবতী ও রাজা পুরগড়ের কন্যা বেঁচে যান, বিজেতারা তাঁদের জীবিতাবস্থায় ধরে ফেলে আকবরের হারেমে পাঠিয়ে দেন। আসফ খা অঢেল ধনসম্পদ ও এক হাজার হাতি পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি মাত্র দুই শত হাতি দরবারে প্রেরণ করেন। আসফ খাঁও আদহম খাঁর রাস্তায় হাঁটতে চেয়েছিলেন। আকবর কোনো ব্যাপারেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন না, এই সময়েও তিনি সবকিছু জেনেও না-জানার ভান করে থাকলেন ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment