আকবরের চিত্রকলা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “শিল্প ও সাহিত্য” বিভাগের একটি পাঠ। আব্দুস সামাদ, দসওয়ন্ত, ফারুখ বেগের মতো চিত্রকরের নামই আমরা অবগত হতে পেয়েছি। আকবর চিত্রকলার অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন। অক্ষর-পাঠের তিনি খুব চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে সফল হতে পারেননি, তবে রেখাঙ্কনে তিনি কিছু বিশেষ আনন্দ পেতেন । তিনি তা শিখেছিলেন তাঁর দক্ষ লিপিকর উস্তাদ খাজা আব্দুস সামাদের কাছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি চিত্রশিল্পী ছিলেন।
আকবরের চিত্রকলা
চিত্রের সঙ্গে তাঁর গভীর ভালোবাসা ছিল, পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে জাহাঙ্গিরও তা পেয়েছিলেন । দসওয়ন্ত শিবিকা- বাহক এক কাহারের পুত্র ছিলেন। কাজ না থাকলে তিনি দেওয়াল কিংবা যে-কোনো জায়গায় চিত্র অঙ্কন করতেন। ঘটনাচক্রে একদিন সেইসব চিত্রের উপর আকবরের নজর পড়ে ।
তিনি প্রতিমা-শিল্পের সমঝদার ও গুণগ্রাহী তো ছিলেনই, তিনি দসওয়ন্তকে আব্দুস সামাদের নিকটে চিত্রাঙ্কন শিক্ষার জন্য লাগিয়ে দিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর হয়ে চীনে ও ইরানী চিত্রকরদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শুরু করলেন। দুঃখের বিষয়, এই চিত্রকর খুব বেশিদিন নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করতে পারেননি।
আকবর ও তাঁর আস্থাভাজন সহায়কদের জীবনী পাঠ করলে জানা যাবে, আকবর নিজের দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য অনেক দূর পর্যন্ত চিন্তাভাবনা করতেন। তিনি তাঁর কাজকর্মের সুফলকে নিজের কালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইতেন না। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ভারতকে এক রাষ্ট্র এক জাতিতে পরিণত করার যে প্রয়াস, সমস্ত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি যা করছেন, তা নিরর্থক হয়ে যাবে না।
নিরর্থক হয়ে গেছে— এ কথা আমরা বলতে পারিনে, যদিও আমাদের দেশ তা থেকে যতটা উপকার লাভ করতে পারত, ততটা উপকার গ্রহণ করতে সমর্থ হয়নি। যদি সমর্থ হতো, তাহলে আমাদের তিন শত বিয়াল্লিশ বছরের কালরাত্রি অতিবাহিত করতে হতো না, দেশ দ্বিখণ্ডিত ও হতো না। শুধু তাই নয়, এমনকি আমাদের দেশ পৃথিবীর এক মহান রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তাছাড়া সমগ্র এশিয়া ইউরোপীয়দের দাসত্ব করতে বাধ্য হতো না, এশিয়ার সমুদ্রে জনশূন্য অথবা জনবসতি- পূর্ণ দ্বীপগুলি ইউরোপীয়দের হাতে চলে যেত না ।
তিনি পাগল হয়ে যান এবং এক দিন নিজের তরবারিতেই আত্মঘাতী হন। আবুল ফজল ‘আইনে-আকবরী’তে তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন। ফারুখ বেগ আর একজন শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী ছিলেন, কাবুল থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দরবারে আসেন। আকবরের আমলে অঙ্কিত বহু চিত্র পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলো দেখলে সম্ভবত আরও কিছু চিত্রশিল্পীর সন্ধান পাওয়া যেতে পারে ।
চিত্রশিল্পী ছাড়াও বহু সুনিপুণ লিপিকর আকবরের দরবারে থাকতেন । আরবি লিপির স্থান তখন দখল করেছে নাস্তালিক । ভালো লিপিকর সেই লিপিতে পুস্তকাদি লিখতেন। কাশ্মীরী দক্ষ লিপিকর মুহম্মদ হুসেনেকে ‘জর্ী কলম’ (সুবর্ণ-লেখনী) বলা হতো । খাজা আব্দুস সামাদ ‘শিরি-কলম’ (মধুর-লেখনী) ছিলেন, সে-কথা আগেই উল্লিখিত হয়েছে।
- আরও দেখুনঃ
- আকবরের আকৃতি পোশাক ইত্যাদি