দাউদ খাঁর বিদ্রোহ, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে দাউদ খাঁর খুব দম্ভ ছিল। তাঁর নিকটে ছিল চল্লিশ হাজার সওয়ার, এক লক্ষ চল্লিশ হাজার পদাতিক সেনা, বিভিন্ন শ্রেণীর কুড়ি হাজার বন্দুক ও কামান, তিন হাজার ছয় শত হাতি এবং কয়েক শত রণপোত। তিনি জানতেন, আকবর তাঁর ব্যবহারকে ক্ষমা করতে পারেন না, সেজন্য আকবরের আসার পূর্বেই তিনি খানেজমান কর্তৃক নির্মিত জমানিয়া’ দুর্গ অধিকার করে বসেন ।
দাউদ খাঁর বিদ্রোহ | বাংলা-বিহার বিজয় | আকবর
খবর পেয়ে আকবর মুনায়ম খাঁ খানখানাকে জৌনপুরের সিপাহসালারকে সঙ্গে নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার হুকুম দেন। মুনায়ম এক বড় সেনাদল নিয়ে পাটনায় পৌছান। লোদী খাঁ— দাউদের মন্ত্রী— তাঁর মোকাবিলা করেন। বৃদ্ধ মুনায়ম খাঁর তখন যৌবনের তেজ ছিল না।
একটা মামুলি লড়াইয়ের পর তিনি নরম শর্তে দাউদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। আকবরের তা মনঃপূত হয়নি, তিনি তাঁর ‘সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাধ্যক্ষ’ রাজা টোডরমলকে বিহারের সেনাধিনায়ক করে প্রেরণ করেন। অর্থমন্ত্রীর কাজের ভার কিছু সময়ের জন্য রায় রামদাসের উপর অর্পণ করে টোডরমল বিহারের দিকে রওনা হন।
যদিও দাউদ খাঁর সিংহাসনে বসার পিছনে লোদীর বড় ভূমিকা ছিল, তবু বৃদ্ধকে খুব ভয় পেতে লাগলেন দাউদ খাঁ, তিনি তাঁকে প্রতারণাপূর্বক হত্যা করেন, সবল শত্রু আকবর-সেনার পোত ছাড়াতে অনায়াসে সফল হলেন। আকবরের ধমকানি খেয়ে বৃদ্ধ মুনায়ম বা ফিরে এসে পাটনা অবরোধ করলেন। সফলতা না দেখে তিনি আকবরকে আসার জন্য লিখলেন। তিনি তখন বাৎসরিক জিয়ারত সেরে সদ্য সদ্য আজমের থেকে ফিরেছেন।
১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর ফতেহপুর সিক্রীতে পুত্রদের খৎনা হয়। সসীমের বয়স তখন চার বছরের কিছু বেশি। ফৈজী কয়েক বছর আগে (১৫৬৭ খ্রিঃ) দরবারে এসে ইতিমধ্যেই কবিরাজ (মালিকুশ-৩ অরা) হয়েছেন। ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় কনিষ্ঠ ভ্রাতা আবুল ফজলও দরবারে এসে গেছেন। একই সময়ে ঐতিহাসিক মোল্লা আব্দুল কাদির বদায়ূনীও দরবারে যোগ দেন। মুনায়ম খাঁর পাঠানো সংবাদ পেতেই আকবর ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জুন যমুনা
নদীপথে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে যাত্রা করেন। বাদশাহের জন্য দুটি বড় বজরা ছিল। নৌকোগুলো অত্যন্ত সুসজ্জিত। নৌকোর উপরেই বাগান তৈরি করা হয়েছে। দু’-দু’টো হাতির সঙ্গে একটা করে বিশাল হাতিও চলেছে। সেনাপতিদের মধ্যে রাজা ভগবানদাস, কুমার মানসিংহ, রাজা বীরবল, শাহবাজ খান এবং নৌ-সেনাপতি (মীরবহর) কাসিমও রয়েছেন। বর্ষাকালের নদীতে নৌ-অভিযান বিপজ্জনকও ছিল। তবে বড় বড় নৌকোর জন্য এ সময় নদীতে পর্যাপ্ত জলও থাকে।
পথে কয়েকটি নৌকো রেখে দিতে হয়, ইলাহাবাদেও এগারোটি নৌকো বর্জন করতে হয়। ছাব্বিশ দিন নদীপথে যাত্রার পর বারাণসীতে (বেনারসে) পৌঁছে আকবর তিন দিন সেখানে বিশ্রাম করেন। তারপর গোমতী-গঙ্গা সঙ্গমের আগে সৈয়দপুরে নোঙর ফেলেন। সেখানে স্থলপথে আসা সেনাবাহিনীও পৌঁছে যায়। বর্ষাকাল সামরিক অভিযানের অনুকূল সময় নয়। দশহরার পরেই আমাদের দেশে অভিযান চালানো হতো। কিন্তু আকবর এইসব সংস্কার মানতে চাইতেন না। আগে থেকেই পরিকল্পনা তৈরি ছিল।
সৈয়দপুরের পরেই এবার লড়াইয়ের ময়দান, সেজন্য আকবর বেগম ও শিশুদের জৌনপুরে পাঠিয়ে দিলেন। মুনায়ম খাঁকে বার্তা পাঠালেন: আমি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছি। সৈয়দপুর থেকে যাত্রা করে বিখ্যাত চৌসাঘাটে পৌছলেন। মনে পড়ল, এখানেই ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে শেরশাহের নিকটে পরাজিত হয়ে হুমায়ূনকে সিংহাসন হারাতে হয়েছিল।
সেনা নৌকো থেকে অবতরণ করে গঙ্গার দক্ষিণ তীর ধরে অগ্রসর হতে লাগল। এখানেই আকবর সুসংবাদ পেলেন, সিন্ধের বিখ্যাত দুর্গ ভক্কর (সখর ও রোডীর মধ্যখানে সিন্ধুর একটি পার্বত্য দ্বীপের উপর অবস্থিত) অধিকৃত হয়েছে।
আকবর নৌকোরোহণেই যাত্রা করে ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৩রা আগস্ট পাটনার সন্নিকটে অবতরণ করেন। সামরিক পরিষদের সভা বসল। জানা গেল, পাটনার অধিকাংশ রসদ গঙ্গাতীরে অবস্থিত হাজীপুর থেকে পাওয়া যায়। প্রথমেই হাজীপুর অধিকার করা আবশ্যক বলে বিবেচিত হল। বর্ষার জন্য এখানে গঙ্গা, শোন, গণ্ডক, সমস্ত নদীই প্রশস্ত হয়েছে। গঙ্গার ঘাট তো কয়েক মাইল বিস্তৃত। হাজীপুর অধিকার করার ক্ষেত্রে অসুবিধে ছিল, কিন্তু তা দখল করে নেওয়া হল। পাঠান সরদারদের মাথা নৌকোয় করে আকবরের সামনে নিয়ে আসা হলে তিনি সেগুলো দাউদের নিকটে পাঠিয়ে। নিলেন।
সেই দিনই কুম্হরাড থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত পাঁচপাহাড়ীর উপর চড়ে আকবর চারদিক লক্ষ্য করলেন। পাঁচপাহাড়ী পাহাড় নয়, মৌর্যকালের স্তূপসমূহের ভগ্নাবশেষকে ছোটখাটো পাহাড়ের মতো দেখায়। দাউদের কাছে তখনও কুড়ি হাজার সওয়ার, বহু যুদ্ধ-হাতি, কামান ও অন্যান্য যুদ্ধসামগ্রী ছিল, কিন্তু তাঁর কাছে চারদিক অন্ধকার মনে হচ্ছিল, রাতের মধ্যেই তিনি পাটনা ত্যাগ করে বাংলার দিকে পলায়ন করলেন। আকবর সেই রাতেই পাটনায় প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে বুঝিয়ে নিবৃত্ত করা হয়, পরদিন সকালে দিল্লী দরওয়াজা দিয়ে তিনি পাটনা প্রবেশ করেন।
ত্রিশ ক্রোশ (প্রায় ষাট মাইল) পর্যন্ত শত্রুর পশ্চাদ্ধাবন করা হয়। দুই শত পঁয়ষট্টিটি হাতি ও অগাধ সম্পত্তি হাতে আসে কিন্তু দাউদ হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যান। পিছু ধাওয়া করে লাভ নেই, আকবর সে-কথা মেনে নিলেন না, মুনায়ম খাঁকে বাংলায় সুবেদার (সিপাহসালার) নিযুক্ত করে কুড়ি হাজার সৈন্য সঙ্গে নিয়ে দাউদের পশ্চাদ্ধাবন করার হুকুম দিলেন।
বৃদ্ধকে সাহায্য করার জন্য টোডরমলকে পাঠানো হল । জৌনপুর বারাণসী, চুনার এবং আরও কত অঞ্চল সরাসরি শাহী বন্দোবস্তে (খালসায়) নিয়ে আসা হল। আকবর ফিরে চললেন। সেপ্টেম্বরের শেষে খানপুরে (জেলা জৌনপুর) ছাউনি গাড়া হয়। এখানেই তিনি মুনায়ম খাঁর সাফল্যলাভের খবর পান। সাত মাসের দুর্দান্ত অভিযান সমাপ্ত করে আকবর ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই জানুয়ারি সিক্রীতে পৌঁছান ।
টোডরমল ও মুনায়ম খাঁ গৌড়ের সম্মুখে গঙ্গার দক্ষিণ তীরে টাঁড়ায় ছাউনি ফেলেছিলেন। সেখানে থেকে তাঁরা পাঠানদের উপর হামলা করার জন্য সেনা পাঠাতেন। পাঠানরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে যুদ্ধ করত না। অথচ, তার ফলে তারা তাদের সুদৃঢ় দুর্গ রক্ষা করতে পারেনি। প্রথমে সুরজগড় (জেলা মুঙ্গের) অধিকৃত হল। তারপর মুঙ্গের, ভাগলপুর ও কহলগাঁও মোগল সেনা হস্তগত হল।
খবর পেয়ে মুনায়ম খাঁ টাঁড়া থেকে রওনা দিলেন। টুকরোঈ (জেলা বালাসোর, মেদিনীপুর ও জলেশ্বরের মধ্যে অবস্থিত) নামক জায়গায় পাঠান সেনাপতি গূজর খাঁর সঙ্গে জোর লড়াই হল। তিনি হাতির মাথায় চমরী গুরুর লেজ, বাঘ-চিতাবাঘের কিংবা পাহাড়ী ছাগলের মুখোশ এবং শিং-সহ ছাল বেঁধে দেন।
তাই দেখে তুর্কি ঘোড়া হেষারবে লাফাতে থাকে, পিছনে সরে যায়। গূজর খাঁ প্রবল শক্তিতে মোগল সেনা-পঙ্ক্তির একেবারে মাঝখানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বহু আমিরের সঙ্গে মুনায়ম খাঁ স্বয়ং সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর সঙ্গেই গূজরের সামনাসামনি মোলাকাত হল ।
খানখানার কটিদেশে তরোয়ালও নেই। এত বড় সেনাপতি কি আর নিজে তরোয়াল নিয়ে বেড়াতে পারেন! হাতে স্রেফ একটা চাবুক ছিল। চাবুক দিয়ে যুদ্ধ করবেন কি, মাথা, কাঁধ ও বাহুতে কয়েকটা মারাত্মক চোট লাগে। মাথায় চোট সেরে যায়, তবে তার জন্য দৃষ্টিশক্তি খারাপ হয়ে পড়ে। কাঁধের ক্ষতস্থানও আরোগ্য হয়, কিন্তু মাথা ঘোরাতে পারতেন না। কাঁধের জখমের জন্য হাত অশক্ত হয়ে পড়েছিল, মামার উপর হাত তুলতে পারতেন না। তবুও বৃদ্ধ পিছু হঠতে রাজি হননি। তাঁর সঙ্গী আমিরেরাও আহত হন। এমন সময় শত্রুর হাতি এসে পড়ে। খানখানানের ঘোড়া লম্ফঝম্ফ শুরু করে। নওকরেরা লাগাম ধরে পিছনে
নিরুপায় অবস্থা। ঘোড়া দৌড়তে দৌড়তে চার ক্রোশ চলে যায়। আফগানও পিছনে টানতে তাবু ও রসদ-পানীর সমস্ত লুঠ হয়ে গেল। এই সময় মোগল সেনাকেও ফিরতে হল। পাঠানরা চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, লড়াইটা হবে কিভাবে? গুজর খাঁ তাঁর তেড়ে এল । লোকজনকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটা তীর এসে তাঁর গায়ে লাগে এবং তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যান। সেনাপতিকে না দেখে পাঠানদের মধ্যে ভীষণ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এবং ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে থাকে।
সেদিন বাদশাহী সেনাকে মারাত্মক পরাজয় স্বীকার করতে হতো। কিন্তু সেনা- পক্তির দক্ষিণ দিকে টোডরমল তার সেনা নিয়ে কঠিন শিলাখণ্ডের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেনাধ্যক্ষ শাহম খাঁ (জলায়র) বাম দিক প্রতিরোধ করছিলেন।
দাউদ পাশা পালটাতে দেখে স্বয়ং টোডরমলের সেনার উপর আক্রমণ চালালেন। কিন্তু টোডরমল তাঁকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দিলেন না। গূজর খাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে দাউদের মনোবল ভেঙে পড়ল। তিনি কটক বারাণসীর দিকে পলায়ন করলেন। ফারসি ঐতিহাসিক সিন্ধুতীরে অবস্থিত অটককে অটক বারাণসী এবং ওড়িশার কটককে কটক বারাণসী বলেছেন ।
টোডরমল দাউদ খাঁর পিছনে পিছনে যান । কটকে পৌঁছে দাউদ তাঁর দুর্গকে সুদৃঢ় করতে শুরু করেন এবং স্থির করেন, সেখানে থেকেই তাকে যুদ্ধ করতে হবে। আক্রমণের জন্য বাদশাহের সেনাপতিরা তৈরি ছিলেন। অস্বাস্থ্যকর জায়গা। অসুখ ছড়িয়ে পড়ে। টোডরমল উৎসাহ সঞ্চারের খুব চেষ্টা করলেন, কিন্তু তার কোনো প্রভাব পড়ল না।
খানখানাকে লিখলেন— আক্রমণের সমস্ত বন্দোবস্ত করা হয়েছে, সাহসের অভাবেই তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। দাউদের ক্ষত তখনও নিরাময় হয়নি, তবুও তিনি সওয়ারিতে চড়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। দাউদ আস্ফালন ত্যাগ করে সন্ধির জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন। টোডরমল সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে ছিলেন, কিন্তু অন্যান্য সেনাধ্যক্ষরা পিগুলোপ করতে চান। এই সময় ঘোড়াঘাটে শাহী সেনা আফগানদের দারুণভাবে পরাজিত করে। দাউদ আরও ভেঙে পড়েন। খানখানা টোডরমলের আপত্তিতে কর্ণপাত না করে সন্ধি স্থাপন করলেন ।
বিজয় উপলক্ষ্যে বিশাল জনসভা করা হল। দাউদ স্বয়ং অধীনতা স্বীকার করার জন্য এলেন । তিনি কটিদেশ থেকে তরোয়াল খুলে খানখানার সম্মুখে রেখে বললেন— “চুঁ ব-মিলেওমা আজীজা জমে ওয়া আজারে রসদ্, মন্ আজ-সিপাহগরী বেজার’ম্। হালা দাখিল দুয়া-গোয়ানেদরগাহ শুদম্ (আপনার মতো বন্ধুর এই ক্ষত ও কষ্ট দেখে আমি সৈনিকবৃত্তির উপর বিরক্ত।
যাঁরা আকবরী দরগার মঙ্গল কামনা করেন, এখন আমি তাঁদের দলেই যোগ দিলাম)। খানখানা তরোয়াল তুলে নিয়ে নিজের নওকরকে দিয়ে দিলেন এবং দাউদের হাত ধরে তাঁকে নিজের পাশে বসালেন। কুশল-প্রশ্ন বিনিময় ও আলাপ-আলোচনার পর দস্তরখানের উপর নানাবিধ ভোজ্যদ্রব্য, রঙ- বেরঙের শরবৎ, সুস্বাদু মিষ্টান্ন সজ্জিত হল। খানখানা নিজের হাতে ফলের পিরিচ ও মোরব্বার পেয়ালা এগিয়ে দিলেন দাউদের সামনে। নূরচশম (চোখের আলো),
বাবাজান (প্রিয় পুত্র), ফরজন্দ (বস) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করছিলেন। মীরমুনশী কলমদান নিয়ে হাজির হলেন। সন্ধিপত্র লেখা হল। থানখানা বাদশাহের পক্ষ থেকে দামি পোশাক-পরিচ্ছদ, স্বর্ণখচিত মুষ্টি-বিশিষ্ট তরোয়াল এবং সেই সঙ্গে বহুমূল্য মুক্তো-রত্নাদি দাউদকে প্রদান করলেন।
তারপর বললেন— “হালা মা কমরে-ওমা ব- নওকরী বাদশাহ মী-বন্দী (এবার আমি বাদশাহের নওকরিতে তোমার কটিবন্ধন করছি)।” কটিবন্ধনের জন্য তরোয়াল পেশ করার পর দাউদ আগরার দিকে মুখ করে মাথা নত করে তসলিম ও আদাব জানাতে শুরু করলেন। কিন্তু টোডরমল এই সভা সম্পূর্ণ বয়কট করেন এবং সন্ধিপত্রে নিজের সীলমোহরের ছাপও দেননি ।
ঠিক বর্ষাকালেই খানখানা টাডা বাদ দিয়ে গৌড় ঘোড়াঘাটের কেন্দ্রস্থলে শাহী ছাউনি স্থাপন করে আফগানদের দাপট দেখাতে চাইলেন। গৌড়ের আবহাওয়া খুবই খারাপ ছিল। আমিরেরা অনেক বোঝানো সত্ত্বেও মুনায়ম খা তাতে আমল না দিয়ে গৌড়ে পুনরায় জনবসতি স্থাপন করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
গৌড়ে জনবসতি গড়ে ওঠেনি, তবে হ্যাঁ, গোরের (কবরের) সংখ্যা যথেষ্ট বেড়েছিল। যুদ্ধে যেসব সেনাপতি ও সৈন্যরা বেঁচে ছিল, তারা অসুস্থাবস্থায় শয্যায় শুয়ে শুয়ে মরতে লাগল। হাজার হাজার লোক এসেছিল, কিন্তু কোনোরকমে কয়েক শত লোক প্রাণ বাঁচিয়ে ঘরে ফিরতে পারে। কবর খোঁড়ারও ক্ষমতা অবশিষ্ট ছিল না। তারা শবদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিত খানখানা সব খবরই পাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি গোঁ ধরে রইলেন। ঘটনাচক্রে এমন হল, সেখানে মাত্র একটি লোক ছিল, যে কোনো অসুখে পড়েনি।

এমন খবর খবর এল, জুনেদ খাঁ পাঠান বিহারে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন । মানুষের কাছে তা বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার মতো খবর। তারা গঙ্গা পেরিয়ে টাঁড়ায় এল। টাঁড়া গৌড়ের থেকে অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর, তবে সেখানেও অসুখ ছড়িয়ে পড়ল। এবং একাদশ দিবসে ৯৮২ হিজরীতে (১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে) বৃদ্ধ আশি বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। খানখানার কোনো উত্তরাধিকারী ছিল না, সেজন্য দীর্ঘকালের সঞ্চিত মায়া- মমতার ধনদৌলত সরকারী কোষাগারের অন্তর্ভুক্ত হল ।
আরও দেখুনঃ