পীরের উপর ভক্তি, ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবরের যমজ পুত্রের জন্ম হয়, তাদের নাম রাখা হয়েছিল হাসান ও হুসেন। হাসান-হুসেন এক মাসই পৃথিবীতে বেঁচে ছিল। আকবরের হারেমে বেগম ও আশ্রিতার সংখ্যা ছিল অগুনতি, অথচ কারো সন্তানাদি হয়নি। যদিও পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর এমন কোনো বয়স নয় যে সন্তান না হওয়ার জন্য হতাশাগ্রস্ত হতে হবে, তবু আকবর অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন। এই সময় তিনি ছিলেন খাঁটি মুসলমান। আজকালকার মতো তখনও মুসলমানদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, পীর-ফকিরদের ও তাঁদের সমাধি দর্শনে মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
পীরের উপর ভক্তি | সিক্রী রাজধানী | আকবর
আকবর কখনো দিল্লীর নিজামুদ্দীন আওলিয়ার সমাধিতে গিয়ে মাথা ঠোকেন, কখনো-বা খাজা আজমেরীর মাজারে— প্রতি বছর আজমের জিয়ারত করতে যেতেন। ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এরকমই চলে । খাজা আজমেরীর শিষ্য-পরম্পরার মধ্যেই ছিলেন শেখ (সন্ত) সলীম চিশতী, তিনি আগরা থেকে তেইশ মাইল পশ্চিমে সিক্রীর পাহাড়ে থাকতেন। তাঁর সিদ্ধিলাভের খুব খ্যাতি ছিল।
আকবর তার চরণে মাথা নত করলে তিনি তাঁর তিনটি পুত্র হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে কছওয়াহী বেগমের গর্ভ সঞ্চার হয়। আকবরের অভিপ্রায়, তার প্রথম সন্তানের জন্ম হোক শেখ সলীমের চরণপ্রান্তেই সেজন্য তিনি তাঁর বেগমকে শেখের কুটিরে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানেই ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে আগস্ট পুত্রের জন্ম হয়, শেখের নামে তার নামকরণ হয় সলীম। সেই বছরই নভেম্বরে এক কন্যারও জন্ম হয়, তার নাম রাখা হয় খানম সুলতান।
আগের বছর ৮ই জুন এক আশ্রিতার গর্ভে একটি পুত্র জন্মলাভ করে, তার নাম রাখা হয়েছিল মুরাদ, তবে সিক্রীর পাহাড়ে তার জন্ম হয়েছিল বলে আকবর তাকে ‘পাহাড়ী’ বলতেন। তৃতীয় পুত্রও এক আশ্রিতার গর্ভে ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর জন্মলাভ করে । আজমেরের সন্ত শেখ দানিয়ালের গৃহে জন্ম হয়েছিল বলে তার নাম রাখা হয় দানিয়াল।
আকবরের আরও দুইটি কন্যা হয়— শুকরুন্নিসা ও আরাম বানু। আকবরের এই তিন পুত্র ও তিন কন্যা ছিল। কন্যাদের মধ্যে খানম সুলতান ও শুকরুন্নিসার বিবাহ হয়েছিল, অবিবাহিত অবস্থাতেই আরাম বানুর মৃত্যু হয় জাহাঙ্গিরের আমলে। এর পর থেকে মোগল শাহজাদীদের অবিবাহিত থাকার প্রথা চালু হয়ে যায় ।
১৫৭২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে সন্তানলাভের জন্য মানত অনুযায়ী আকবর পদব্রজে আজমের জিয়ারত করতে যান। প্রতিদিন চোদ্দ মাইল হেঁটে ষোলোটি পান্থশালা পেরিয়ে আজমের পৌছান। সেখান থেকে দিল্লীতে নিজামুদ্দীন আওলিয়ার দরগায় ভক্তি প্রদর্শন করতে যান।
সেই বছরই সেপ্টেম্বরে তিনি আবার আজমের যান, সেখানে নাগৌরেও তিনি কিছু অট্টালিকাদি নির্মাণ করেন, সেগুলোর মধ্যে সতেরো ছিদ্র-বিশিষ্ট একটি ফোয়ারাও ছিল। সেই বছর তিনি বিকানের ও জয়সলমেরের রাজকন্যাদের বিবাহ করেন এবং মালওয়ার সুলতান বাজবাহাদুরও আত্মসমর্পণ করেন।
জানা যায়, রাজস্থানে তখন জংলি গাধা থাকত । তিনি একদিনে ষোলোটি গাধা হত্যা করেছিলেন পুত্রলাভের আনন্দে তিনি পাঞ্জাবেও কয়েক জায়গায় জিয়ারত করতে যান ৷ ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে তিনি সিক্রী চলে আসেন। এই বছর তুরানের (মধ্য- এশিয়া) শক্তিশালী উজবেক যান আব্দুল্লার দূত দরবারে আসেন।
আরও দেখুনঃ