Site icon History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GDCN

কবিরাজ ফৈজীর বাল্যকাল

কবিরাজ ফৈজীর বাল্যকাল | কবিরাজ ফৈজী | আকবর

কবিরাজ ফৈজীর বাল্যকাল – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “আকবর” বিষয়ের “হেমচন্দ্ৰ হেমু” বিভাগের একটি পাঠ। ফৈজী আবুল ফজলের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং সে-সময়ের আশ্চর্য স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষ শেখ মুবারকের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১৫৪৭ কিংবা ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে (৯৪৫ হিজরীতে) আগরায় যমুনা-তীরে রামবাগে— তৎকালীন চারবাগে তাঁর জন্ম হয় এবং তাঁর মৃত্যু হয় আটচল্লিশ বছর বয়সে ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে।

কবিরাজ ফৈজীর বাল্যকাল

 

 

তিনি সুরদাস ও তুলসীদাসের সমকালীন ছিলেন। শেরশাহের আমলে (১৫৪০-৪৫ খ্রিঃ) শেখ মুবারক চারবাগে আস্তানা গাড়েন, কিন্তু মোল্লাদের অত্যাচারে কোনো স্বাধীনচেতা মানুষেরই নিশ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি ছিল না, বিশেষ করে শেরশাহের উত্তরাধিকারী ইসলামশাহ শূরার শাসনকালে। শেখ মোল্লারা শেখ আল্লাঈ ও তাঁর গুরু মিয়া নিয়াজীর একজনকে হত্যা করিয়েছিলেন, অপরজনকে মৃতপ্রায় করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সৌভাগ্যের কথা, শেখ মুবারক তাদের কবলে পড়েননি। তবু যতদিন না আকবরের শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়েছে, ততদিন। মুবারককে নানারকম দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল ।

বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, তবে ফৈজী ও তাঁর চার বছরের ছোট ভ্রাতা আবুল ফজলের সৌভাগ্য যে তাঁরা একজন উদার মহাপণ্ডিত পিতার কোলে লালিত- পালিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। মুবারকের একজন শিক্ষাগুরু ছিলেন আবুল ফজল গাজরুণী, তাই দেখে তিনি পুত্রদের নামের সঙ্গে আবুল শব্দটি যুক্ত করতে পছন্দ করতেন। ফৈজীর নাম রেখেছিলেন আবুল ফয়েজ ফৈজী, দ্বিতীয় পুত্রের নাম আবুল ফজল, এভাবে অন্য পুত্রদেরও নাম রাখেন। ফৈজী প্রথমে নিজের উপনাম রেখেছিলেন ‘মশহুর’, কিন্তু বিশ্বের সবাই তাঁকে ফৈজী নামেই জানেন।

 

 

শেখ মুবারক কবি ছিলেন না, কিন্তু কাব্য-রসিক ছিলেন, তাই নিজের পুত্রদের মধ্যে যখন তিনি কবি-প্রতিভার অঙ্কুরোদগম লক্ষ্য করেন, তখন তিনি তাতে জুল-সিঞ্চন করে তার যথাযথ শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর দায়িত্ব পালন করেন।

শৈশব থেকেই ফৈজীর কবি-প্রতিভার উন্মেষ হতে থাকে, এ কথা বলা অনাবশ্যক। কেবল পণ্ডিত হওয়ার জন্য পিতাকে কত সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হয়েছে, সম্ভবত সেটা লক্ষ্য করেই ফৈজী তিব (চিকিৎসাশাস্ত্র)-ও উত্তমরূপে অধ্যয়ন করেছিলেন। কিন্তু পরে চিকিৎসাবিদ্যাকে জীবিকার অবলম্বন হিসাবে গ্রহণ করতে পারেননি।

বিনা পয়সায় তিনি বহু মানুষের চিকিৎসা করতেন, প্রথমে কেবল চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র লিখে দিতেন, পরে টাকা-পয়সা হাতে এলে বিনামূল্যে ওষুধপত্রও দিতেন। তারপর আগরায় একটি ভালো চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে দেন।

 

 

বাড়ির অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে একবার পিতা ফৈজীকে সঙ্গে নিয়ে সরকারী ‘অভাবগ্রস্তদের সহায়তা’ বিভাগের অমাত্যের কাছে যান এবং এক শত বিঘা জমির আবেদন করেন। সেই অমাত্য তাঁকে চরম অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। প্রাণ বাঁচানোর জন্য দুই পুত্রকে নিয়ে মুবারক কত ছোটাছুটি করেছেন, কতদিন আত্মগোপন করে থেকেছেন। সব সময় আশঙ্কা ছিল, সাম্যবাদী শেখ আল্লাঈয়ের মতো তাঁকেও না মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version